রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

নাজমুন নাহার :

প্রকাশিত: ১৮:৫৫, ২০ জুলাই ২০২৫

মাইজদীতে টানা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে ঘরবাড়ি, ক্ষতিগ্রস্ত চাষাবাদ

মাইজদীতে টানা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে ঘরবাড়ি, ক্ষতিগ্রস্ত চাষাবাদ
সংগৃহীত

নোয়াখালী জেলার মাইজদী শহরসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে টানা বৃষ্টির ফলে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতি। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ কমে এলেও জেলার নিম্নাঞ্চলগুলো এখনো পানির নিচে। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মাইজদী এলাকাবাসী।

টানা বৃষ্টিতে প্রায় দুই সপ্তাহ পরও ফসলি জমি থেকে পানি নামেনি। নষ্ট হয়ে গেছে পেঁপে, শসা, করলা, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়সসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেত ও ধানের বীজতলা। ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা।

মাছের ঘের থেকে ভেসে গেছে লক্ষ টাকার মাছ। গবাদিপশু রক্ষায় বিপাকে পড়েছেন খামারিরাও।

বুধবার ও বৃহস্পতিবার সরেজমিনে মাইজদী শহর ঘুরে দেখা যায়, কিছু কিছু প্রধান সড়ক, উপসড়ক, অলিগলি এমনকি বাসাবাড়ির আঙিনাও পানিতে ডুবে আছে। হাঁটুপানি থেকে কোথাও কোথাও কোমরসমান পানি জমে রয়েছে। দোকানপাট বন্ধ, রাস্তায় চলাচল সীমিত। স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

জানা যায়, ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণেই অল্প বৃষ্টিতেই মাইজদীতে পানি জমে থাকে। এবারের টানা বৃষ্টিতে এলাকা যেন রূপ নিয়েছে এক বিশাল জলাশয়ে। রিকশা, ভ্যান তো দূরের কথা, হেঁটে চলাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। অনেক বাড়িতে পানি ঢুকে রান্নাবান্না ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে সৃষ্টি হয়েছে চরম ভোগান্তি।

জেলায় এখনও কার্যকর পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি বছর একই দুর্ভোগ হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো স্থায়ী সমাধান নেওয়া হয় না।

একজন বাসিন্দা বলেন, “গত তিন দিন ধরে বাসায় পানি ঢুকে আছে। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে চরম কষ্টে আছি। বাজারে যেতে পারছি না, খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। অথচ কেউ খোঁজও নিচ্ছে না।”

তবে সংকটকালে কিছু প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ১৯ জুলাই ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে ৫০০টি পরিবারে ত্রাণ বিতরণ করেছে।

জেলার কিছু অংশে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে নিরাপত্তার জন্য, যা দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে। অনেকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।

সদর, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দারা জানান, পানি নামছে ধীরগতিতে। ফলে অধিকাংশ এলাকায় জনদুর্ভোগ চরমে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের তথ্যমতে, ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত। পানিবন্দি ৪৬ হাজার ৭০টি পরিবারের ১ লাখ ৯২ হাজার ৫০৩ জন মানুষ। কবিরহাট ও সুবর্ণচরে ক্ষতিগ্রস্ত ৪৫টি বসতঘর ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত একটি।

পাঁচটি উপজেলায় ৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ হাজার ৮৫০ জন মানুষ ও ১৭১টি গবাদিপশু আশ্রিত। ৫১টি মেডিকেল টিম গঠিত, এর মধ্যে ২৯টি কাজ শুরু করেছে। ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বিপর্স্ত জনজীবন এখন কার্যকর সরকারি পদক্ষেপের অপেক্ষায়। এলাকাবাসীর দাবি, জরুরি ভিত্তিতে পানি সরানোর পাশাপাশি টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে হবে, যেন প্রতি বছর একই দুর্দশা না হয়।

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, “পানি নিষ্কাশনে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।”