জবিতে সাংবাদিক সমিতির ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত"

"জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত" করা হয়েছে।
শুক্রবার (২০ জুন ২০২৫) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) সাংবাদিক সমিতির ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে। সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, আলোচনা সভা, র্যালি ও র্যাফেল ড্র’র মতো নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে সংগঠনটি।
সকালে একটি আনন্দ র্যালির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। র্যালি শেষে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটা ও ফল উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ সময় সমিতির সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের উপস্থিতিতে জবি ক্যাম্পাস মিলনমেলায় পরিণত হয়। বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন।
তিনি বলেন, "সঠিক রাষ্ট্র গঠনে সংবাদপত্রের স্বাধীন মত প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিবাদীরা পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল। আমাদের প্রগতিশীল শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষা কমিশন গঠন ও শিক্ষা বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে।”
সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইমরান হুসাইনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্দীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ বিলাল হোসাইন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব জনাব কাদের গনি চৌধুরী এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি জনাব শহিদুল ইসলাম।
অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্দীন বলেন, "গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ফ্যাসিবাদ-বিরোধী ঐক্য শক্তিশালী করতে হবে। ফ্যাসিবাদী শক্তি নির্মূলে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ফ্যাসিবাদ-বিরোধী ঐক্যের ক্ষেত্রে জবি দেশের জন্য রোল মডেল হয়েছে, যা সকলের অনুসরণীয়।"
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন বলেন, “হাজার বছরের ইতিহাস বলে গণতান্ত্রিক অধিকার না পাওয়ার তাড়নায় বাঙালি বারবার বিদ্রোহ করেছে। বাঙালি জাতি যখনই বঞ্চিত হয়েছে তখনই বিদ্রোহ করেছে।”
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, “গণতন্ত্র ও সংবাদপত্র একে অপরের পরিপূরক, গণমাধ্যম হচ্ছে গণতন্ত্রের চোখ। স্বাধীন সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
ফ্যাসিবাদদের যেসকল গণমাধ্যম সহায়তা করেছে তাদের সাথে কখনও আপোস হতে পারে না।”
শহিদুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিবাদী সরকারকে ফ্যাসিবাদ দানবে পরিণত করায় গণমাধ্যমের অবদান সবচেয়ে বেশি।”
আলোচনায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, "৫ আগস্ট শুধু আন্দোলন নয়, এটি ছিল গণঅভ্যুত্থান, যার পর রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। ফ্যাসিবাদী সরকার রাজনৈতিক শিষ্টাচার ধ্বংস করেছিল, গণতন্ত্রবিরোধী নীতি চালু করেছিল এবং গুমের সংস্কৃতি তৈরি করেছিল। এখন রাজনীতিকে মানবিক ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে মনোনিবেশ করতে হবে, সাধারণ মানুষের চাহিদা ও শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে।"
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি জেনারেল ড. মু. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, “বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে একই প্ল্যাটফর্মে এ ধরনের আয়োজন সত্যিই অনন্য। জবি শুধু রাজনীতির মডেল হবে না, জবি গোটা বাংলাদেশ ছাড়িয়ে পুরো পৃথিবীর মানচিত্রে গণতন্ত্র, জবাবদিহিতা ও সাংবাদিক জগতের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখতে স্বক্ষম হবে। ফ্যাসিবাদী শক্তি অনেক সাংবাদিক তৈরি করেছে, কিন্তু কলমসৈনিকদের সতর্ক থাকতে হবে, যেন ফ্যাসিবাদকে কোনোভাবে প্রশ্রয় না দেওয়া হয়।"
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, "গণমাধ্যমের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকা উচিত নয়। ফ্যাসিবাদের সময় গণমাধ্যমের যে দায়িত্বহীনতা দেখা গেছে, তা কাটিয়ে উঠতে বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কারের মধ্যেই রয়েছে নিরপেক্ষতা প্রমাণের সর্বোত্তম সুযোগ।"
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খান বলেন, "ফ্যাসিবাদী সরকারের পরিবর্তনের পাশাপাশি যদি শাসনব্যবস্থার আমূল সংস্কার হতো, তবে রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠন সম্ভব ছিল। আমাদের জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতি করতে হবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে প্রকৃতভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে।"
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির (বিডিপি) সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ নিজামুল হক নাঈম বলেন, "গণমাধ্যমকে যেন কোনোভাবেই শাসকগোষ্ঠীর তোষণযন্ত্রে পরিণত হতে না দেওয়া হয়। সত্যনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতাই কেবল গণতন্ত্রকে প্রাণবন্ত রাখতে পারে।"
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহতাব হোসেন লিমন। আলোচনা সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র্যাফেল ড্র’র আয়োজন করা হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক এবং ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।