শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশিত: ১৩:৩০, ২৯ মে ২০২৫

‘গণঅভ্যুত্থানকে আসিফ যেভাবে উপস্থিত করেন তা ইতিহাসের চরম বিকৃতি’

‘গণঅভ্যুত্থানকে আসিফ যেভাবে উপস্থিত করেন তা ইতিহাসের চরম বিকৃতি’
সংগৃহীত

গণঅভ্যুত্থানকে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল যেভাবে উপস্থিত করেছেন, তা ইতিহাসের ‘চরম বিকৃতি’ বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বুধবার দিবাগত রাত ১২ টার দিকে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে এ মন্তব্য করেন তিনি।

ওই পোস্টে তিনি লিখেন, ‘‘আসিফ নজরুল ভুল বলেছেন। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল দুঃশাসন, নির্বাচন তামাশায় পরিণত করে জবরদস্তি ক্ষমতা ধরে রাখা, ভয়াবহ দমন-পীড়ন, অভূতপূর্ব মাত্রায় দুর্নীতি, দখল লুণ্ঠন এবং সম্পদ পাচার, সীমাহীন ঔদ্ধত্য এবং সবশেষে নির্বিচার নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও জুলুমের বিরুদ্ধে। এরকম শাসনব্যবস্থার অবসান এবং বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছিল গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে। ‘আদেশক্রমে বিচার ব্যবস্থা’ পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ জীবন দেয় নাই, ৭১-এর ঘাতক দালাল-মবতন্ত্র-নারী এবং ভিন্নমত বিদ্বেষী হিংস্রগোষ্ঠী-চাঁদাবাজ-দখলদার পুনর্বাসন বা তৈরির জন্য গণঅভ্যুত্থান হয় নাই। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ, যাদের অনেকেই যুদ্ধাপরাধী বিচারের জন্য লড়াই করেছেন, শ্রেণি-লিঙ্গ-জাতি-ধর্মীয় নিপীড়ন ও বৈষম্যমুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠার চিন্তা ও লড়াইয়ে দীর্ঘদিন থেকে যুক্ত আছেন। এই গণঅভ্যুত্থানকে আসিফ যেভাবে উপস্থিত করেছেন তা ইতিহাসের চরম বিকৃতি এবং অসংখ্য মানুষের প্রাণ, শক্তি, শ্রম আর প্রত্যাশার ওপর দাঁড়ানো একটি বড় অর্জনকে কলঙ্কিত করা। আমি এর প্রতিবাদ জানাই।’’

বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের এই স্ট্যাটাসের কমেন্টে আইন উপদেষ্টা লিখেন, ‘আনু ভাইকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তিনি এখানে যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তাতে আমি বিস্মিত হয়েছি। প্রথমত, তিনি যেসব কারণে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে বলেছেন তাতো আমিও বলি, এসব লক্ষ্যেই গত ১৫ বছর আমি সবসময় সোচ্চার ছিলাম, এখনো আছি। গণঅভ্যুত্থানের পর যতোটুকই লিখেছি, একটু সহজ ভাষায় ঠিক এসব লক্ষ্যের কথাই আমি লিখেছি। কিন্তু আনু ভাই, আমার পোস্টটা তো গণঅভ্যুত্থানের সার্বিক লক্ষ্য নিয়ে লেখা নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচারের বিষয় নিয়ে। আওয়ামী আমলে সেখানে কীভাবে বিচার হয়েছে তা তিনি নিশ্চয়ই জানেন। সেখানে বিচার হয়েছে মূলত ফাঁসির দাবি বাস্তবায়নের আন্দোলনের ডিকটেশনে, অভিযুক্তরা দোষী ছিল নাকি ছিল না, কিংবা দোষী হলে কতটুকু দণ্ড তাদের প্রাপ্য-সেটি নির্ধারণে ডিউ প্রসেস ও ন্যায়বিচারের শর্তগুলো মেনে নয়। কাজেই সেই বিচার অপরাধী সাব্যস্তরা আসলে মানবতাবিরোধী অপরাধে অপরাধী ছিল নাকি তারা সেটি ছিল না-তা নিশ্চিতকরণে ব্যর্থ হয়েছিল। (এ ধরনের কথা আমি তখনো বলতাম, এজন্য বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হয়েছিলাম)।’

ড. আসিফ নজরুল আরও লিখেন, ‘‘সেরকম একটি বিচারের ঘাটতি গতকালের সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে পরিলক্ষিত হয়েছে বলেই জামাত নেতা জনাব আজাহার মুক্তি পেয়েছেন। গত দশ মাসের আরো বহু রায়ের মতো এই রায়ও আওয়ামী আমলের বিচারের ঘাটতিকে উন্মোচন করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান না হলে এই সুযোগ সৃষ্টি হতো না। কিন্তু তার মানে এটি নয় যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একমাত্র লক্ষ্য ছিল এটি। ‍দ্বিতীয়ত, কোনো প্রমাণ ছাড়া স্বনামধন্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বের এই বিচারকে আনু ভাই ‘আদেশক্রমে বিচারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ বলে অভিহিত করেছেন। আনু ভাই আমি আপনাকে নিশ্চিত করি, এখানে সরকারের কারো আদেশ ছিল না। এ ধরনের ঢালাও কথা না বলে আপনি বা অন্য কেউ রায়টির পর্যালোচনা করে বের করুন কোথায় এখানে আদেশের আলামত রয়েছে, কোথায় অবিচার হয়েছে। তৃতীয়ত, আপনি লিখেছেন, ‘এই গণঅভ্যুত্থানকে আসিফ যেভাবে উপস্থিত করেছেন তা ইতিহাসের চরম বিকৃতি এবং অসংখ্য মানুষের প্রাণ, শক্তি, শ্রম আর প্রত্যাশার ওপর দাঁড়ানো একটি বড় অর্জনকে কলঙ্কিত করা’। আপনার এই বাক্য আমাকে আতঙ্কিত করেছে। এতোটা জেনেরালাইজেশন যদি আপনার মতো একজন মানুষ করে, তাহলে বাকীরা কী করবে!’’