বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশিত: ১১:১৩, ৯ জুলাই ২০২৫

সহায়তা না পেয়ে জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে আহতদের ভাঙচুর

সহায়তা না পেয়ে জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে আহতদের ভাঙচুর
সংগৃহীত

অর্থ সহায়তা না পেয়ে রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর করেছেন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের কয়েকজন।

 

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যায় বারডেম হাসপাতালের পাশে অবস্থিত ফাউন্ডেশনের অফিসে এ ঘটনা ঘটে।

 

জানা যায়, দ্বিতীয় ধাপের সহায়তা পাওয়ার আশায় দুপুরের পর থেকে আহতরা ফাউন্ডেশনের সামনে জড়ো হন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর সন্ধ্যায় ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর জানিয়ে দেন, আজ সহায়তা দেওয়া সম্ভব নয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রায় ২০-২৫ জন আহত ব্যক্তি প্রথমে অফিসে তালা লাগান, পরে এক কর্মচারীর ‘অশোভন আচরণে’ উত্তেজিত হয়ে ভাঙচুর করেন।

 

ভাঙচুর শেষে অফিস কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি চেয়ার এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। ভাঙা হয়েছে পানির ফিল্টার এবং তিনটি দরজার কাঁচ। কাচের টুকরো ছড়িয়ে–ছিটিয়ে ছিল মেঝেতে।

 

আহত মামুন হোসেন বলেন, “জুলাই ফাউন্ডেশনের একজন কর্মী আমাদের ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার কথা বলেন। এতে সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে ভাঙচুর চালান।” 

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, “আগে তো জুলাই ফাউন্ডেশন ছিল না। এই ফাউন্ডেশন আমাদের জন্যই। আমরা আহতরা চিকিৎসার টাকা চাইতে এসেছি। কিন্তু বারবার ঘোরানো হচ্ছে।”

তিনি জানান, গত বছরের আন্দোলনে আহত হয়ে ১১ মাস ধরে চিকিৎসাধীন তিনি। বলেন, “আমার মাথায় গুলি লেগেছে। এখনো চিকিৎসাধীন। আজকে সাধারণ একটি বিষয় নিয়ে পুলিশ আমাদের মেরেছে। ফাউন্ডেশনকে ফোন দেওয়া হলেও কেউ যায়নি। তাহলে কিসের জুলাই ফাউন্ডেশন?”

আরেক আহত ব্যক্তি, সাভার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন বলেন, “সাত মাস ধরে দ্বিতীয় ধাপের টাকা পাওয়ার জন্য ঘুরছি। যাদের ভেতরের লোকদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, তারা আগে টাকা পাচ্ছে। যাদের মামা-চাচা আছে, তারাই সুবিধা নিচ্ছে। অথচ আমরা যারা গুরুতর আহত, যারা বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছি, তাদের দ্বিতীয় ধাপের টাকা দেওয়া হচ্ছে না।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল আকবর বলেন, “আহতদের অনেকে এখনো মানসিক ট্রমায় আছেন। তাদের এই রাগ ও ভাঙচুরের একটি প্রেক্ষাপট আছে। তাদের প্রতি আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। তারা উত্তেজিত ও হতাশাগ্রস্ত।”

দ্বিতীয় ধাপের টাকা না দিয়ে বারবার ঘোরানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “আহতদের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার মধ্যে ব্যবধান রয়েছে। গুরুতর আহতদের প্রথম ধাপে টাকা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে এখন পর্যন্ত ৮০৬ জনকে টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকিদেরও ধাপে ধাপে দেওয়া হবে। আমরা দ্রুত সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছি।”

তিনি জানান, ফাউন্ডেশনের তহবিলে বর্তমানে ৭ কোটি টাকা রয়েছে। এ টাকা থেকে ধারাবাহিকভাবে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

 

এছাড়া, আহতদের তালিকা থেকে ৩৯ জনকে ‘ভুয়া’ হিসেবে শনাক্ত করে বাদ দিতে এবং শহীদদের তালিকা থেকে চারজনের নাম বাদ দিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

ভাঙচুরের ঘটনার পর কামাল আকবরের সঙ্গে আলোচনায় হয় আহতদের। আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী রোববার অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।