বুধবার ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২

সংবাদ পরিক্রমা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:১০, ৮ অক্টোবর ২০২৫

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে খাওয়ার অযোগ্য চাল

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে খাওয়ার অযোগ্য চাল
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীতে হত দরিদ্র ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় যেসব সুবিধাভোগী এসব চাল পান তা একেবারেই খাওয়ার অযোগ্য। ‌দুর্গাপুর ও বাগমারায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের হাতে ধরা পড়ার পর উঠে আসে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। একটি চক্র নিম্নমানের চাল সরবরাহ করে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। এ ঘটনায় একজনকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ।

নিয়ম অনুযায়ী কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে তা মিলে ছাঁটাই করে চাল সংগ্রহ করার কথা খাদ্য গুদামগুলোর। কিন্তু তা না করে নিম্নমানের চাল কিনে গুদামে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন খাদ্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। সম্প্রতি রাজশাহীর দুর্গাপুর ও বাগমারা উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও খাদ্যবান্ধব প্রকল্পের ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করতে গিয়ে খাবার অনুপযোগী চাল দেখতে পান জনপ্রতিনিধিরা।

এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করলে সরেজমিনে ভবানীগঞ্জ ও দুর্গাপুর খাদ্য গুদাম পরিদর্শনে গিয়ে এর সত্যতা পান। সম্প্রতি চালের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। এতটাই নিম্নমানের চাল যা গবাদি পশু ও খাবেনা বলে মন্তব্য করেন জনপ্রতিনিধিরা।

রাজশাহী দুর্গাপুরের জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) রুপালি খাতুন বলেন, ‘চাল ভালো নয়। কোনো বস্তারটিই খাওয়ার যোগ্য নয়। এমনকি গরুও খাবে না।’

রাজশাহী বাগমারার বড়বিহানালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান মিলন বলেন, ‘ফুড অফিস বা সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা এই নিম্নমানের চাল কিনেছেন অতিরিক্ত মুনাফার জন্য।’

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখানে প্রায় ২৩ ধরনের চাল সংগ্রহ করেছি। নমুনা সংগ্রহ করেছি। সেগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের। আমরা এটার মান স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি।’

ক্ষুব্ধ সুবিধাভোগীরাও। তারা জানান, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় যে প্রকল্প চলছে, তাতে কার্ডধারীরা ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল পান, প্রায় ৮২ হাজার মানুষ। এছাড়া, খাদ্যবান্ধব প্রকল্পের আওতায় বছরের মধ্যে ৬ মাস ৫০ হাজার হতদরিদ্র মানুষ বিনামূল্যে মাসে ৩০ কেজি করে চাল পান। তবে এইসব চাল যদি খাবার উপযোগী না হয়, তাহলে এই মানুষগুলো কীভাবে খেয়ে বাঁচবে?

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ভবানীগঞ্জ খাদ্য গুদামের উপ-পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করে নওগাঁর নিয়ামতপুরে বদলি করা হয়েছে। অভিযুক্ত কর্মকর্তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।

রাজশাহী বাগমারার ভবানীগঞ্জ খাদ্য গুদামের সাবেক উপ-পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া (বর্তমানে নওগাঁর নিয়ামতপুর খাদ্য গুদামে কর্মরত) বলেন, ‘১৪-১৫ জন লেবার তাড়াহুড়া করে গাড়ি থেকে মাল নামায়। একটা-দুইটা ফসকে যেতে পারে। আর আমার কাছে তেমন জনবলও নেই।’

রাজশাহী বাগমারা উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা নবী নওয়াজেস আমীন সেতু বলেন, ‘স্টাফ স্বল্পতার কারণে সবগুলো গাড়ি চেক করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এজন্য কিছু চাল অনিচ্ছাকৃতভাবে চলে এসেছে।’
 
এদিকে, এ ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও এক মাস পার হওয়া সত্ত্বেও তা জমা হয়নি। বিষয়টি জানতে চাইলে ক্যামেরার সামনে রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কথা বলতে রাজি হননি।

তবে খাদ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, একটি সিন্ডিকেট ভালো চাল সরিয়ে খারাপ চাল সরকারি গুদামে ঢুকাচ্ছে। সিন্ডিকেটটির সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত মাসোয়ারাও পাচ্ছেন এবং নামে-বেনামে অঢেল সম্পদ তৈরি করেছেন। চলতি বছরে এই সিন্ডিকেট প্রায় ৫ কোটি টাকারও বেশি লালচে গন্ধযুক্ত চাল সরবরাহের পরিকল্পনা করেছিল, তবে ধরা পড়ায় তা ভেস্তে যায়। এতে সরকারি অর্থের অপচয় হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত তিন মাসে জেলার ৯টি খাদ্যগুদামে সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ টন চাল খাবার অনুপযোগী। জেলায় সুবিধাভোগী মানুষের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়