চিকিৎসাধীন অর্ধশত, চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ। রাজশাহী মেডিকেল ও জেলা সদর হাসপাতলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অর্ধশত ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা সবাই স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে বর্তমানে ৪৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে ১০ জন পুরুষ, ২৬ জন নারী, ৯ জন শিশু। শিশুদের মধ্যে ছেলে ৮ ও মেয়ে ১ জন। এছাড়া হাসপাতালটির বহির্বিভাগে বুধবার (২৫ জন) নতুন শনাক্ত ২৩ জন। এনিয়ে মোট ৪৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এরই মধ্যে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কবির হোসেনের (৩৭) মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া রামেকে চিকিৎসাধীন পাঁচজনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা।
রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৫ জুন) রামেক হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় কবিরের। মৃত কবির চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তপুর উপজেলার রুকুনপুরের গোলাম রাব্বানীর ছেলে।
চলতি মৌসুমে রামেক হাসপাতালে প্রথম কোনো ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হলো। তবে হাসপাতালটিতে শিশুসহ আরও পাঁচজন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজন পুরুষ ও তিনজন নারী। এছাড়া এক নারী হাসপাতালের আইসিইউ চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহত ও আক্রান্তরা সবাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীরা হাসপাতালের ১৭, ১৪, ৩৬ ও ৩৮ নাম্বার ওয়ার্ডের চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরমধ্যে মঙ্গলবার (২৪ জুন) হাসপাতালের ১৭ নাম্বার ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে দোলন (১৮), তার দুই দিন আগে ২২ জুন ১৪ নাম্বার ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন পাভেল খান (৪৪), গত ২০ জুন ৩৮ নাম্বার ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন তহামিনা (৪২), গত ২৩ জুন ৩৬ নাম্বার ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন মারফুন (৬০)। এছাড়া একই দিনে ভর্তি হওয়া ২৭ বছর বয়সী ফেরদৌসী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হাসপাতালে মৃত ডেঙ্গু রোগী কবিরের ভাই সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গত ২০ জুন জ্বরসহ বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় কবিরকে। হাসপাতালে সে চিকিৎসাধীন ছিল। ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। পরে তাকে আইসিইউ নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিকেল ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তার ভাই কবির এলাকায় কৃষি কাজ করতেন। জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আগে তার অন্য কোন জেলায় ভ্রমণের রেকর্ড নেই। ধারণা করা যাচ্ছে এলাকায় সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। গত মঙ্গলবার স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কে বিশ্বাস বলেন, হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে এখনও ৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে একজন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অপরদিকে, জুন মাসের শুরুর দিক থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেড়েছে ডেঙ্গু রোগী। তাদের মধ্যে অনেকেই জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া গুরুতর হলে তাকে রামেক হাসপাতালে রেফার্ড করেছে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের বিষয়ে হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন- ‘রোগীদের ভ্রমণ রেকর্ড নেই। তারা স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, সাধারণত জুন-জুলাই মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। এবারও জুন মাসে তাই বেড়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ক্রিটিক্যাল রোগীদের রাজশাহীতে রেফার্ড করা হচ্ছে। এছাড়া শিশুদের চেয়ে মধ্য বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তবে আক্রান্তদের ভ্রমণের রেকর্ড নেই। তারা স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. একেএম শাহাব উদ্দিন বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা তথ্য অফিসের সহোযোগিতায় মাইকিং কার্যক্রম চালু আছে। প্রতিটি মসজিদে জুম্মার দিনে ইমামদের মধ্যমে মুসল্লিদের মাঝে সচেতনতামূলক প্রচারণাও চালানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি সাধারণ মানুষ সচেতন হলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমতে পারে।