মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

যশোর প্রতিনিধি :

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ১ জুলাই ২০২৫

যশোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রাশেদের পদত্যাগ!

যশোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রাশেদের পদত্যাগ!
সংগৃহীত

যশোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক রাশেদ খান পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

 

মঙ্গলবার (১ জুলাই) ভোররাত ৩টার দিকে তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া এক ফেসবুক পোস্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

 

পোস্টে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যশোর জেলার ‘আহ্বায়ক’ পদ থেকে আমি স্বেচ্ছায় অব্যহতি নিচ্ছি। একই সঙ্গে এনসিপি ও এর ছাত্র কিংবা যুব উইংয়ের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই৷’

 

এর কিছুক্ষণ পর নিজের সেই পোস্টে কমেন্টস করেন রাশেদ। সেখানে তিনি নানা অভিযোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যশোর জেলার আহ্বায়কের দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি। আমি সবসময় আমার শ্রম, মেধা, অর্থ, ধৈর্য ও সময় ব্যয় করে সাধ্যমত চেষ্টা করেছি সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে; কতটা পেরেছি সেটা মূল্যায়ন করার দায়িত্ব আপনাদের। কিন্তু আমি আমার নিজেকে যদি মূল্যায়ন করি, সেক্ষেত্রে বলবো, আরও ভালো কিছু হওয়া উচিত ছিল। 

 

বর্তমানে অর্থকষ্টে ভুগছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি একজন আর্টিস্ট, ব্যক্তিগতভাবে আমি দীর্ঘদিন যাবৎ পেশাগত কোনো কর্মে যুক্ত না থাকায় অর্থকষ্টে আছি। আমার বিরুদ্ধে যে সব অর্থবিষয়ক/ব্যাংক ব্যালেন্সবিষয়ক মুখরোচক গল্প উৎপাদন করা হয়, তা নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত! কারণ আমার বাস্তবতা আমি নিজে ফেস করি। তবু যদি কারো সন্দেহ থেকে থাকে, তাহলে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করে দেখার অনুরোধ রইল।

রাশেদ বলেন, আমি এই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত আছি। এতোটুকু বলতে পারি, জুলাই বিক্রি করিনি আমি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিখিত কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ না থাকলেও আমার নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ আছে, সেটা হয়তো অনেকের সঙ্গে মিলবে না। 

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নবগঠিত কমিটি এনসিপি দ্বারা প্রভাবিত একটি প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো নির্দেশনা না থাকায়, সংগঠন সারাদেশেই স্তিমিত হয়ে গেছে। স্ব স্ব ইউনিট থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকসময় কেন্দ্রীয় নেতাদের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। একই সঙ্গে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এনসিপি, যুবশক্তি, বাগছাস ইত্যাদি রাজনৈতিক প্লাটফর্মে যুক্ত হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি কমন প্লাটফর্ম হলেও এর নবগঠিত কমিটি এনসিপি দ্বারা প্রভাবিত একটি প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে, যা বিভিন্ন জেলার নেতাদের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে!

২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে যশোর জেলা কমিটি প্রকাশ করা হয়। সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেল আগামী ছয় মাসের জন্য ওই কমিটি অনুমোদন করেন। ঘোষিত যশোর জেলার কমিটিতে রাশেদ খানকে আহ্বায়ক, জেসিনা মুর্শিদকে (প্রাপ্তি) সদস্যসচিব, আবদুল্লাহ আল মামুনকে মুখ্য সংগঠক ও ফাহিম আল-ফাত্তাহকে মুখপাত্র করা হয়। তারা সবাই যশোর সদরের বাসিন্দা। কমিটিতে ১১ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক, ১২ জনকে যুগ্ম সদস্যসচিব, ৮ জনকে সংগঠক ও ৭৯ জনকে সদস্য করা হয়।

কমিটি ঘোষণার পরদিন ২৭ নভেম্বর আহ্বায়ক রাশেদসহ কমিটির অনেকের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের অভিযোগ তুলে যুগ্ম আহ্বায়ক-১-এর পদ থেকে পদত্যাগ করেন মাসুম বিল্লাহ। পরে ৩০ নভেম্বর একই অভিযোগে পদত্যাগ করেন সদ্য ঘোষিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সজীব হোসেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি উপজেলা কমিটি গঠন-সংক্রান্ত বিষয়ে সাংগঠনিক নীতিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সদস্যসচিব জেসিনা মুর্শীদ প্রাপ্তির পদ স্থগিত করা হয়। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সূত্র জানা গেছে, গত বছর কোটা আন্দোলনের প্রথম থেকেই যশোরে নেতৃত্ব দেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাশেদ খান। বাম ঘরানার ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা এই শিক্ষার্থী জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে জেলায় তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। যার পুরস্কার স্বরুপ পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলার দায়িত্বভার তুলে দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। হঠাৎ কমিটি থেকে পদত্যাগ করায় হতবাক হয়েছেন জেলার বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ। রাশেদের এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে গুঞ্জন উঠেছে, কয়েকদিনের মধ্যে জেলা কমিটির আরও ডজনখানেক নেতাকর্মী পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। তারা সবাই রাশেদের অনুসারী হিসেবেই পরিচিত।