বাড়ছে লিপস্টিকের দাম, সাজসজ্জার পণ্যেও শুল্কের ছোঁয়া!

একটা সময় ছিল, সাজসজ্জা মানেই ছিল একটু স্নো পাউডার আর ছোট্ট একটি লিপস্টিক। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাতে ছড়ি জড়িয়ে কলেজ বা স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি—এটাই ছিল নারীর দৈনন্দিন সৌন্দর্যচর্চার ছবি।
কিন্তু সময় বদলেছে। নারীর জীবনধারা যেমন পাল্টেছে, তেমনি বদলেছে সাজগোজের উপকরণ ও তার প্রয়োজনীয়তার ধারণাও। এখনকার নারীদের সৌন্দর্যচর্চা কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যের চর্চা নয়—এটা আত্মবিশ্বাসের প্রতীক, নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার প্রকাশ।
আর সেই ‘নিজের যত্ন’-এর পেছনেই এবার ব্যয় বাড়তে চলেছে। কারণ, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কসমেটিক্স ও স্কিন কেয়ার পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
বিশেষ করে লিপস্টিকের আমদানি শুল্ক মূল্য ২০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৪০ ডলার করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা অনেক নারীর কাছে নিত্যসঙ্গী এই পণ্যের দামে সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
শুধু লিপস্টিকই নয়—এই তালিকায় রয়েছে:
* লিপ লাইনার, লিপগ্লস, লিপজেল
* আইশ্যাডো, আইলাইনার, আইব্রো পেন্সিল, মাশকারা
* ম্যানিকিউর-পেডিকিউরের জেল
* ফেস ক্রিম, ময়েশ্চার লোশন, ফাউন্ডেশন
* ফেসওয়াশ, মেহেদি, মেকআপ কিট ইত্যাদি।
এই পণ্যের বেশিরভাগই এখনও আমদানিনির্ভর। তবে সূত্র বলছে, একটি বড় স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি দেশে এসব পণ্য উৎপাদন শুরু করেছে। দেশীয় উৎপাদকদের সুরক্ষা এবং বাজারে সমতা আনার লক্ষ্যে এই শুল্কবৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, এসব পণ্যকে বিলাসপণ্য হিসেবে বিবেচনা করেই রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর কৌশল হিসেবে শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব আনা হয়েছে।
বাজার বিশ্লেষণে কী বলছে পরিসংখ্যান?
বাংলাদেশে ২০-৩৯ বছর বয়সী নারীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৭৩ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই সৌন্দর্যপণ্যের নিয়মিত ব্যবহারকারী—যা বড় রাজস্ব আহরণের সম্ভাবনা তৈরি করছে বলে মনে করছে ট্যারিফ কমিশন।
তবে এ খাতে রয়েছে একাধিক জটিলতা।
* লাগেজ পার্টির মাধ্যমে আসা বিপুল পরিমাণ সৌন্দর্যপণ্যে সরকার কোনো রাজস্ব পায় না।
* আবার বৈধ আমদানিতেও অনেক সময় দামি পণ্যের মূল্য কম দেখিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়।
* ঢাকার অভিজাত এলাকার দোকানগুলোতে উচ্চ মূল্যে বিক্রি হলেও অধিকাংশ পণ্যে বিদেশি ট্যাগ সাঁটানো থাকে, যার বৈধ আমদানি ও শুল্ক পরিশোধ নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিকে যেমন দেশীয় উৎপাদকদের সুরক্ষা প্রয়োজন, অন্যদিকে ভোক্তার নাগালের বাইরে না গিয়ে ন্যায্য বাজারমূল্য নিশ্চিত করাও জরুরি।