নগদ’-এর গ্রাহকের অর্থ ও তথ্য চরম ঝুঁকিতে: বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশের অন্যতম মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ লিমিটেড-এর গ্রাহকের অর্থ ও তথ্য বর্তমানে চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রবিবার (১ জুন) রাতে এক লিখিত বিবৃতিতে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘নগদ’-এর ব্যাংক হিসাবগুলোর স্বাক্ষরদাতা পরিবর্তনের চেষ্টা, এবং আন্তর্জাতিক অডিট ফার্ম কেপিএমজির মাধ্যমে চলমান ফরেনসিক অডিট বন্ধ করে দেওয়া—এ দুটি ঘটনা প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রকৃত অর্থ জমা ছাড়াই নগদ কমপক্ষে ৬৪৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত ই-মানি ইস্যু করেছে, যার ফলে ডাক বিভাগের তথা সরকারের সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটিকে রাষ্ট্রের বৈধ মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় সরাসরি আঘাত এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একচেটিয়া অর্থ ইস্যুর ক্ষমতার প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে।
এছাড়া অনুমোদনহীন ৪১টি পরিবেশকের মাধ্যমে প্রায় ১,৭১১ কোটি টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে, যা মূলত বিভিন্ন সরকারি ভাতা বিতরণের অর্থ ছিল। এ ঘটনায় ৩ ফেব্রুয়ারি মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অন্যদিকে, একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে ১৮ হাজার ২৩৩ জন গ্রাহকের হিসাবে বেআইনিভাবে অর্থ স্থানান্তরের ঘটনায় ‘নগদ’-এর ১৪৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।
সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার একটি চিঠি ও আদালতের স্থগিতাদেশের ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিযুক্ত প্রশাসক দল ‘নগদ’-এর কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এই ফাঁকে মামলার প্রধান আসামি ও প্রতিষ্ঠানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুক নিজেকে বৈধ এমডি দাবি করে আরেক আসামি শাফায়েত আলমকে সিইও হিসেবে নিয়োগ দেন, যার পেছনে পরিচালনা পর্ষদের কোনো অনুমোদন ছিল না।
এছাড়াও প্রশাসক দলের ই-মেইল, ফাইন্যান্স ও আইটি বিভাগের নিয়ন্ত্রণ এবং ই-মানি ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন সিস্টেমে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ফলে ১২ মে থেকে তারা কার্যক্রম পরিচালনায় সম্পূর্ণভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছে।
সবশেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, কেপিএমজি কর্তৃক ‘নগদ’-এর পূর্ণাঙ্গ ফরেনসিক অডিটের উদ্যোগ নিলেও সহযোগিতা না পাওয়ায় অডিট কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।