শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ১৭ জুলাই ২০২৫

গোপালগঞ্জে বলপ্রয়োগ ও প্রাণহানির ঘটনায় আসকের গভীর উদ্বেগ!

গোপালগঞ্জে বলপ্রয়োগ ও প্রাণহানির ঘটনায় আসকের গভীর উদ্বেগ!
সংগৃহীত

গোপালগঞ্জে এনসিপির রাজনৈতিক সমাবেশে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ৪ নাগরিক নিহত ও বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। একইসঙ্গে সব পক্ষকে সংযম ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। 

 

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণমাধ্যমের সূত্রে জানা গেছে, বুধবার গোপালগঞ্জ পৌর পার্কে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বঘোষিত একটি রাজনৈতিক সমাবেশ শেষে হঠাৎ করে উত্তেজনা তৈরি হয় এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ এই সমাবেশে হামলা চালায়।

 

হামলার একপর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। এরপর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় জনতার ওপর বলপ্রয়োগ করে এবং প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। এই ঘটনায় দীপ্ত সাহা (২৫), রমজান কাজী (১৮), সোহেল মোল্লা (৪১) ও ইমন (২৪) নামের চারজন নিহত হন।

 

আহত হন আরও অনেকে, যাদের কেউ কেউ গুলিবিদ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আসক মনে করে, মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করার অধিকার বাংলাদেশের সংবিধানে নিশ্চিত মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্র ও প্রশাসনের দায়িত্ব হলো, এই অধিকার সুরক্ষা করা এবং যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সময়ে উত্তেজনা প্রশমন ও মানুষের জীবনরক্ষা নিশ্চিত করা। একইসঙ্গে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকা। গোপালগঞ্জে যেভাবে জনসাধারণের ওপর বলপ্রয়োগ ও গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে, তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড এবং সংবিধান উভয়েরই চরম লঙ্ঘন, যা একান্তই অগ্রহণযোগ্য।

 

অন্যদিকে, পুলিশের মহাপরিদর্শক গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে জানিয়েছেন, পুলিশ গোপালগঞ্জের ঘটনায় প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেনি। অথচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওচিত্রে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার এবং গুলির শব্দ স্পষ্টভাবে শোনা যাচ্ছে। তাহলে কারা এই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করল? আসক মনে করে, এ প্রশ্নের সুস্পষ্ট ও প্রামাণ্য ব্যাখ্যা দেওয়া না হলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, ভয় ও প্রশাসনের প্রতি অনাস্থা আরও বাড়বে।

 

দেশে স্থিতিশীলতা ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সংযম, ধৈর্য ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাচ্ছে। বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রতি আহ্বান থাকবে, এই ধরনের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি পরবর্তীতে যেন কোনো নিরীহ মানুষ হয়রানি বা সহিংসতার শিকার না হন এবং নতুন করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নজির সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

আসক জোর দিয়ে বলছে, এই ঘটনায় নিহত চারজনের মৃত্যুর দায় সরকার এড়াতে পারে না। অবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান করতে হবে। এ ছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃবৃন্দ ও সমর্থকদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার পেছনে দায়ীদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমাবেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়ত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। একইসঙ্গে এ ঘটনায় আহতদের সুচিকিৎসা এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি রাষ্ট্রকে দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করতে হবে।  

 

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, এই ধরনের বলপ্রয়োগ, গুলি চালানো ও প্রাণহানির ঘটনা দেশের গণতান্ত্রিক পরিসর, মানবাধিকারের মূল্যবোধ এবং নাগরিক নিরাপত্তার প্রতি এক ধরনের হুমকি। নাগরিকের জীবন রক্ষা রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব। গোপালগঞ্জের ঘটনায় রাষ্ট্র সে দায়িত্ব পালনে কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।