আ.লীগ একটা সন্ত্রাসী সংগঠন : নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ৫ আগস্টের পরেই আমরা বলেছি, আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল না, এটা একটা সন্ত্রাসী সংগঠন। কিন্তু তার থেকে বড় বিষয় এটা একটা ফ্যাসিস্ট মতাদর্শ। এই মতাদর্শকে আমাদের পরাস্ত করতে হবে। শুধু সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে নয়, আওয়ামী লীগকে আইনিভাবে, রাজনৈতিকভাবে ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে রেলগেটের শহীদ স্মৃতি চত্বরের সামনে দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের শত্রু চিহ্নিত করেছি-মুজিববাদ। এই মুজিববাদের আদর্শই হচ্ছে আওয়ামী লীগের গোড়া। বাংলাদেশকে বিভাজিত করেছে তারা। বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করেছে, গুম, খুনসহ সবকিছু জায়েজ করেছে এই মুজিববাদের আদর্শের মাধ্যমে। আমরা এটাও বলেছি, মুজিব বা তার মুক্তিযুদ্ধ কিন্তু এক জিনিস না। ফলে আমাদের মুজিববাদের হাত থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকেও রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণকে রক্ষা করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে। যারা বাংলাদেশকে দিল্লির হাতে তুলে দিয়েছিল, বাংলাদেশকে তাবেদারি রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল তাদের হাত থেকে রক্ষা করে সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জানি, সেই লড়াইয়ে রাজবাড়িবাসীকে আমরা পাশে পাবো।
তিনি বলেন, এনসিপি গণঅভ্যুত্থানের পর যে ইনসাফের ও বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিল সেই বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের অনেক দিন লড়াই করতে হবে। লড়াই কেবল একদিকে নয়। আমরা সেটার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা জানি, আমাদের জীবনের নিরাপত্তা আপনারা ছাড়া কেউ দেবে না। আপনারাই আমাদের বৈধতা, আপনারাই আমাদের নিরাপত্তা। আমরা জীবনের ভয় করি না, সেটা গত বছর জুলাই মাস থেকে। রাজপথে নেমেছি এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে, নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য, সেই প্রতিষ্ঠার ও নতুন দেশ প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ছি না এটা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, গতকাল গোপালগঞ্জে হামলা করে তারা ভেবেছিল পদযাত্রা শেষ হয়ে যাবে। তারা সুযোগের ব্যবহার করে ভেবেছিল আতঙ্ক তৈরি করবে। সারা দেশে মানুষ আর আমাদের পদযাত্রায় ও পথসভায় আসবে না। যদি তারা সশস্ত্র কায়দায় না আসতো আমরা বিশ্বাস করি আজকে রাজবাড়ীতে যত মানুষ হয়েছে গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষ ঠিক ততটাই আমাদের সমাবেশে আসতো।
নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রিয় রাজবাড়ীবাসী জাতীয় নাগরিক পার্টি ও জুলাই নেতৃবৃন্দের প্রতি আপনাদের আস্থা ও ভালোবাসা রয়েছে, ঠিক একই পরিমাণ আস্থা ও ভালোবাসা আপনাদের প্রতি আমাদের রয়েছে। আপনাদের মেধাবী সন্তানরা এনসিপিতে রয়েছে। তারা দল নয় পুরো বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরছে। প্রিয় রাজবাড়ীবাসী আপনাদের সমস্যার কথা আমরা শুনলাম। রাজবাড়ির সন্তানরা আপনাদের সামনে প্রতিশ্রুতি দিলেন। আমরা মনে করি, সবার আগে সমস্যা খুঁজে বের করতে হবে। যদি আমরা সমস্যাই না জানি, সমাধান কীভাবে খুঁজে বের করবো। তাই আমরা সারা দেশে এখন সমস্যা খুঁজে বেড়াচ্ছি। এই পদাযাত্রার মূল উদ্দেশ্য জেলায় জেলায় ঘুরে আপনাদের সমস্যাগুলো খুঁজে বের করা। আপনাদের সমস্যার সমাধানের রাজনীতি আমরা করতে চাই।
রাজবাড়ীর সাহসী সন্তানরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছে। সেই শহীদদের আদর্শকে, আকাঙ্খাকে আমরা ধারণ করি। আমরা জানি, আমাদেরকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না। আমাদের লক্ষ্য নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। সেই লড়াইয়ের আহ্বান জানাচ্ছি।
এনসিপির উত্তর অঞ্চলের মূখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় পথসভায় আরও বক্তব্য দেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজবাড়ীর সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ, এনসিপির দক্ষিণ অঞ্চলের মূখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা।
এ সময় এনসিপি সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মূখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, ডা. তাজনুভা জাবীন, দক্ষিণ অঞ্চলের সংগঠক মো. আতাউল্লাহসহ কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় এবং জেলা ও উপজেলার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সমাবেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদ পরিবারের সদস্য ও আহতরা উপস্থিত ছিলেন।