রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর—জাগরণের চিরন্তন আলোকবর্তিকা

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেবল বাংলা সাহিত্যের নয়, বিশ্ব-সাহিত্যের এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র।
সাহিত্য, সংগীত, দর্শন, চিত্রকলা—জীবনের নানা শাখায় তাঁর অবদানের পরিসর এতই বিস্তৃত যে, তাঁকে একক কোনো শ্রেণীতে আবদ্ধ করা যায় না। ১৮৬১ সালের ৭ই মে জন্ম নেওয়া এই মহীরুহ, বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিয়েছেন তাঁর অনন্য সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে।
রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যজগৎ যেমন প্রেম, প্রকৃতি ও মানবতার গানে সমৃদ্ধ, তেমনি গভীর রাজনৈতিক ও সামাজিক চেতনার প্রতিফলনও আমরা সেখানে দেখতে পাই। "গীতাঞ্জলি"র জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়ে তিনি শুধু ভারতীয় উপমহাদেশ নয়, সমগ্র প্রাচ্যের জন্য এক ঐতিহাসিক সম্মানের বার্তা এনেছিলেন।
তিনি একাধারে ছিলেন মানবতাবাদী, শিক্ষাবিদ এবং দার্শনিক। শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে গিয়ে এক নতুন শিক্ষার আদর্শ স্থাপন করেছিলেন। তাঁর মতে, শিক্ষা হতে হবে মুক্ত, সৃজনশীল এবং প্রকৃতির সঙ্গে সংযুক্ত।
আজকের সময়ে, যখন ঘৃণা, বিভাজন ও সংকীর্ণতার অন্ধকারে সমাজ আবদ্ধ, তখন রবীন্দ্রনাথের মানবতার বাণী আমাদের জন্য আরও প্রাসঙ্গিক। তাঁর গান আজও জাগায় মননে ও প্রেরণায়—"যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে"—এই আহ্বান আজও প্রতিবাদের ভাষা, সাহসের প্রতীক।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু একজন কবি নন; তিনি এক যুগ, এক চেতনা, এক সভ্যতার সেতুবন্ধন। তাঁকে মনে রাখা মানে কেবল অতীতকে স্মরণ করা নয়, বরং ভবিষ্যতের আলোর পথ খোঁজা।