বৃহস্পতিবার ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

ফরিদপুর প্রতিনিধি :

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ১ মে ২০২৫

এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে আওয়ামী পরিবারের সন্তান!

এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে আওয়ামী পরিবারের সন্তান!
সংগৃহীত

ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন ফরিদপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদা বেগমের মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা। তিনি হলেন জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ নাসিরের ভাগনি।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সদস্য সচিব আক্তার হোসেনের যৌথ স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা যায়।

ওই চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক করা হয়েছে মো. আব্দুর রহমানকে এবং সংগঠক করা হয়েছে মো. রাকিব হোসেনকে।

এ ছাড়া ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী জেলার দুইজন করে ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

ফরিদপুর অঞ্চলের টিমকে বলা হয়েছে উক্ত টিমকে উল্লিখিত অঞ্চলের কেন্দ্রীয় কমিটির নিম্নোক্ত সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে কমিটির প্রস্তাবনার নির্দেশনা প্রদান করা হলো।

ফরিদপুর জেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে যে দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের একজন সৈয়দা নীলিমা দোলা। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদা বেগমের মেয়ে এবং জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ওরফে নাসিরের ভাগ্নি। তার বাবার নাম সৈয়দ গোলাম দস্তগির। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী।

সৈয়দা নীলিমা ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিভাগে মাস্টার্স করেন। এরপর তিনি কিছুদিন একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে কাজ করেছেন। বর্তমানে ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি সিনেমা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী।

জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির মেয়ে হয়েও এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, আমার পরিবারের আওয়ামী রাজনীতি করা-সংক্রান্ত কিছু পোস্ট আপনাদের সামনে আসতে পারে। আমি নিজের দিক থেকে একটা ব্যাখ্যা আমার মানুষজন এবং রাজপথের সহযোদ্ধাদের দিয়ে রাখতে চাই। আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন আমি করে আসতেছি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নো মেট্রো অন ডিইউ’ মুভমেন্ট, রামপালবিরোধী আন্দোলন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিএসএ) বাতিলের আন্দোলন, সুফিয়া কামাল হলকে ছাত্রলীগমুক্ত করাসহ অন্যান্য সব আন্দোলনের আমি অতি পরিচিত মুখ।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লেখালেখিও পুরোনো। ২০১২ সাল থেকে রাজপথই আমার আসল পরিবার। সরাসরি ছাত্রলীগ করে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তাই আমার নাগরিক কমিটির সদস্য হতে বাধা কোথায়?

তিনি আরও বলেন, এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেনে-শুনে-বুঝে এবং আমি ‘লিটমাস’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেই আমাকে এই দ্বায়িত্ব দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনসিপির ফরিদপুর অঞ্চলের সংগঠক মো. রাকিব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, নীলিমা যেহেতু এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন তাই তার নামটি সংগঠক টিম হিসেবে প্যাডে রাখতে আমরা বাধ্য। তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি যে অভিযোগটি আসছে এটি আমরা কমিটিতে তার নাম আসার পরে দেখতে পাচ্ছি। তার ব্যক্তিগতভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। আমরা যতটুকু জেনেছি, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তার লড়াই-সংগ্রামটা দীর্ঘ ১০ বছরের।

তিনি আরও বলেন, নীলিমা বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। তবে তাকে সিলেকশনের ব্যাপারটা আমরা বলতে পারবো না। এটি বলতে পারবে নাগরিক কমিটির সার্চ কমিটি। তারাই তাকে সিলেকশন করেছেন। তবুও যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় আমরা এটা নিয়ে কাজ করবো।

মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীর মেয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার এনসিপি কমিটি গঠনের—এ বিষয়টি কোন দৃষ্টিতে দেখছেন, জানতে চাইলে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব সোহেল রানা বলেন, তার (সৈয়দা নীলিমা) পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ। আমরা দেখেছি গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার মামা গোলাম নাসির কীভাবে আমাদের ওপর নির্বিচারে গুলি ছুড়েছেন। তার মায়ের কর্মকাণ্ডও আমাদের অজানা নয়। তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগে মামলাও হয়েছে।

সৈয়দা নীলিমা দোলার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পর্যন্ত নেই—মন্তব্য করে সোহেল রানা বলেন, আসলে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হলে ভালো হতো। সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করা হলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।

সর্বশেষ