শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশিত: ১১:২৬, ১২ জুলাই ২০২৫

আ.লীগ পুনর্বাসনে বিএনপি-এনসিপির ভূমিকা লিখে ছাত্রদল নেতার পদত্য!

আ.লীগ পুনর্বাসনে বিএনপি-এনসিপির ভূমিকা লিখে ছাত্রদল নেতার পদত্য!
সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ লিসানুল আলম লিসান তার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ফেসবুকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি পোস্টে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে বিএনপি-এনসিপির ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন।

 

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি এই ঘোষণা দেন।

 

পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কারণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ‘সাধারণ সম্পাদক’ পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।’

 

স্ট্যাটাসে তিনি তুলে ধরেন ছাত্রদল ও বিএনপির সঙ্গে তার দীর্ঘ রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ইতিহাস। তিনি লেখেন, ‘জন্মলগ্ন থেকে পারিবারিক রাজনীতির সূত্র ধরে দীর্ঘ ১০ বছরের ঊর্ধ্বে এই দলের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলাম। বিএনপির একদম দুঃসময়েও দলের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত ছিলাম। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাবা জেলে থাকাকালীন (মামলা সংখ্যা ২৮), দীর্ঘ দুই মাসের ঊর্ধ্বে বাড়ি ছাড়া হয়েছি। ভোর রাতে লুকোচুরি করে আম্মার সাথে একবার দেখা করে আসতাম। ২৮ অক্টোবর সমাবেশ পরবর্তীও হরতাল অবরোধসহ বহু কার্যক্রমে যুক্ত ছিলাম। এই দলের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি ও বহু নির্মমতার ভাগীদার আমি হয়েছি। সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনেও সরাসরি সামনের সারিতেই আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। এই সব কিছুর মূলে আমার একটাই স্বপ্ন ছিল— ‘নতুন বাংলাদেশের বিনির্মাণ এবং একটা সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ।’

 

বিশেষ করে ৫ আগস্ট পরবর্তীতে, অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম, দেশ নতুন করে বিনির্মাণ হবে। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, ৫ আগস্ট পরবর্তীতে দেশটাকে সুন্দরভাবে বিনির্মাণের পরিবর্তে, সবাই যে যার মতো করে নিজের স্বার্থ এবং ভোগের রাজনীতি করে গেছে। এই দায়ে জামায়াত, বিএনপি, এনসিপি সবাই দণ্ডিত। সবাই নয়া বন্দবস্তের কথা বললেও কেউ কথা রাখেনি। জুলাইকে কেউ স্মরণ করেনি। জুলাইকে কেউ মনে রাখেনি। শহীদদের রক্তের সাথে সবাই নির্বিচারে গাদ্দারী করেছে।

 

পোস্টে বর্তমান রাজনীতি নিয়ে লিসানুল আলম লিসান লেখেন, ‘একটা কথা বলি। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে আমার নিজ উপজেলা হাতিয়ায় যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয়েছে, এনসিপি এবং বিএনপি কর্তৃক আওয়ামী লীগের যে পরিমাণ পুনর্বাসন হয়েছে, তা আমি বিগত কোনো সময় দেখি নাই। বহু নেতাকে দেখেছি, যাদের সুনির্দিষ্ট উপার্জনের সোর্স না থাকলেও এখন শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন, রাতারাতি ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। বিএনপির পাশাপাশি এনসিপির হান্নান মাসুদও চাঁদাবাজি ও আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করে রাতারাতি শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। অথচ ওনার মতো তরুণ নেতা চাইলে পুরো রাজনীতির পেক্ষাপটই বদলে দিতে পারতেন। জামায়াতও এই অন্যায় গাদ্দারীর বাহিরে নয়। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ক্ষমতা বলে পদায়নসহ, ৫ আগস্টের পরবর্তীতে যথেষ্ট নোংরা রাজনীতির চর্চা তারা করে গেছেন। (দয়া করে কোনো নব্য রাজনীতিবিদ আমাকে লজিক/ জ্ঞান দিতে আসবেন না। সব দলেরই রাজনীতির একদম ভেতরের পিঠ আমি খুব ভালো করেই দেখে আসছি)।’

পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘তবে রাজনৈতিক সব দলেই প্রকৃত সৎ এবং নিষ্ঠাবান কিছু ভালো মানুষেরও দেখা পেয়েছি। আপনাদের জন্য সমবেদনা। আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে এদেশে সুষ্ঠু ও গঠনতান্ত্রিক রাজনীতির স্বপ্ন দেখেছি, প্রকৃতি দেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখে এসেছি— এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। আমরা ব্যর্থ। আমার জানামতে, সজ্ঞানে রাজনীতির অপব্যবহার করে কখনো কারো কোনো ধরনের ক্ষতি আমি করিনি। যদি ভুলবশত আমি করেও থাকি, আপনাদের নিকট আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। যেদিন প্রকৃতি স্বচ্ছ বাংলাদেশ বিনির্মাণের ডাক আসবে, সেদিন আপনাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমিও থাকবো মিছিলের অগ্রভাগে— প্রথম বুলেটের শিকার হতে। তবুও এদেশের বুকে শান্তি ফিরে আসুক। এদেশের মাটির ঊর্ধ্বে আমার কাছে কিছুই মূল্যবান না। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’

সম্পর্কিত বিষয়: