মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

রাজশাহী প্রতিনিধি :

প্রকাশিত: ১০:১৩, ১৫ জুলাই ২০২৫

রেল স্টেশেনের কক্ষ দখল করে বিএনপি নেতার অফিস!

রেল স্টেশেনের কক্ষ দখল করে বিএনপি নেতার অফিস!
সংগৃহীত

রাতেই খুলে যায় তালা, পরিত্যক্ত কক্ষ হয়ে ওঠে ‘অঘোষিত পার্টি অফিস’ এমন দৃশ্য এখন প্রায় নিয়মিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেল স্টেশনে। স্টেশনের একটি পরিত্যক্ত কক্ষ হঠাৎ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। টেবিল-চেয়ার বসিয়ে সেখানে চলছে নিয়মিত রাজনৈতিক আড্ডা। 

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, এটি এখন ব্যবহার হচ্ছে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য। যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির মহানগর মতিহার থানার সভাপতি মো. একরাম আলী।

 

দীর্ঘদিন অব্যবহৃত ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকা রেলওয়ের এ কক্ষটির এমন রূপান্তর ঘটেছে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে। যদিও দিনে এটি তালাবদ্ধ থাকে, রাতে আলো জ্বলে, ভেতরে বসেন একরাম আলী ও তার অনুসারীরা।

 

স্থানীয়দের মতে, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরই কক্ষটি দখলে নেওয়া হয়। এখন নিয়মিত এখানে রাজনৈতিক আড্ডা হয় বলে তারা জানান। তবে খোলাখুলি কিছু বলতেও নারাজ আশপাশের লোকজন।

 

সরেজমিনে গিয়েও এর সত্যতা পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায়, কক্ষটিতে একটি টেবিল বসানো আছে। টেবিলটির চারপাশে চেয়ার রয়েছে। সেখানে মহানগর মতিহার থানা বিএনপির সভাপতি একরাম আলী একটি চেয়ারে বসে আছেন। তার অনুসারী অন্তত ৮ থেকে ১০ জনকে সেই কক্ষে চেয়ারে বসে ও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে ওই কক্ষের কোনো সাইনবোর্ড বা ব্যানার চোখে পড়েনি। ভবনে বিএনপি ও জামায়াত লেখা সংবলিত একাধিক দেয়াললিখন পাওয়া গেছে।

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের উত্তর পাশে স্টেশন বাজার এলাকায় অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে এ স্টেশন চালু করেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে দীর্ঘদিন ধরেই স্টেশনটি প্রায় অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। কিছু লোকাল ট্রেন এখানে দাঁড়ায়। বেশ কয়েকজন ছিন্নমূল মানুষ স্টেশনে রাত কাটান। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কক্ষটি দখলে নিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। তবে মাসখানেক আগে থেকে ওই কক্ষে একরাম আলী ও তার অনুসারীরা নিয়মিত বসছেন। সেটি রঙিন রং করে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে ‘পার্টি অফিস’ বানিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

 

রেলস্টেশনের কক্ষ দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে একরাম আলী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কেন দখল করতে যাব আমি, কী দরকার? জরাজীর্ণ অবস্থায় অনেক দিন ধরে সেটি পড়ে ছিল। সেখানে মাদক সেবন ও অসামাজিক কাজ হয়। আমি খুলে সেটি পরিষ্কার করেছি। আমি দখল করছি না, জনগণের স্বার্থে সেটি জনগণ ব্যবহার করছে। সবাই বসে চা খায়। এখানে দখল করার কোনো বিষয় নেই।’ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে একরাম বলেন, ‘কার অনুমতি নেব রে ভাই। সেটি দুর্বস্থায় পড়ে ছিল। সরকারি জায়গা সরকার নিয়ে নেবে, আমার অসুবিধা কি?’

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্টেশন বাজারের এক চায়ের দোকানি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর কক্ষটি দখলে নেওয়া হয়েছিল। এর পর থেকে সেটি তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল। তবে সম্প্রতি রং করে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে সেখানে নিয়মিত বসছেন তারা (বিএনপির লোকজন)। শুনেছি, বসার জায়গা হিসেবে কক্ষটি নিয়েছেন তারা। একরাম ভাই এই কক্ষ দখলে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’

 

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমি নতুন জয়েন করেছি। বিষয়টি সর্ম্পকে আমি অবগত নই। আপনার মাধ্যমেই প্রথম জানলাম। আমি খোঁজখবর নিয়ে যদি এমন তথ্যের সত্যতা পাই, তাহলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত বিষয়: