শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

নাজমুন নাহার :

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ৩১ জুলাই ২০২৫

দুর্বল ব্যাংকের আমানত ফেরতের গ্যারান্টি দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

দুর্বল ব্যাংকের আমানত ফেরতের গ্যারান্টি দিল বাংলাদেশ ব্যাংক
সংগৃহীত

আর্থিক খাতে জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ও একীভূত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব আমানতকারী তাদের জমাকৃত সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত পাবেন—এমন নিশ্চয়তা দিয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪৪১তম বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় ‘ডিপোজিট প্রোটেকশন অর্ডিন্যান্স-২০২৫’-এর সংশোধিত খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।

 

এই পদক্ষেপটি এসেছে এমন সময়ে, যখন পাঁচটি শরীয়াভিত্তিক ব্যাংক—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক—সরকারি উদ্যোগে একীভূত হওয়ার ঘোষণায় গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দেয়। ব্যাংকগুলোর ৯২ লাখ গ্রাহকের মধ্যে অনেকেই আতঙ্কে নিজেদের টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন এই গ্যারান্টি শুধু এই পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকদের নয়, আরও ১৬টি চিহ্নিত দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীদেরও সুরক্ষা দেবে। এমনকি একীভবন না হলেও গ্রাহকের টাকা ফেরতের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

এই গ্যারান্টি বাস্তবায়নে নতুন অর্ডিন্যান্সে একটি বিশেষ তহবিল গঠনের পরিকল্পনাও রাখা হয়েছে। সূত্র জানায়, এই তহবিল গঠনে প্রয়োজনে টাকা ছাপানো বা বন্ড ইস্যুর মতো পদক্ষেপ নিতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুরো কার্যক্রম বাস্তবায়নে দুই থেকে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে বলে জানা গেছে।

 

বর্তমানে কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হলে একজন আমানতকারী সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা পান। দেশের ১৭ কোটির বেশি ব্যাংক হিসাবধারীর জন্য এই সীমা অপ্রতুল বলে দীর্ঘদিন ধরেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

নতুন অর্ডিন্যান্সে এ সীমা বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব রয়েছে। কেউ যদি ১০ লাখ টাকার বেশি আমানত রাখেন, তাহলে অতিরিক্ত অংশের জন্য ট্রেজারি বন্ড দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে।

 

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “অমানতকারীদের আস্থা যখন নিচে, তখন এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। তবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।”

 

ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, “আমানতকারীর আস্থা ফেরাতে এই ধরনের উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। তবে অর্থনীতির ভারসাম্য না রেখে টাকা ছাপা হলে তা আরও সংকট তৈরি করতে পারে।”

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের আমানত সুরক্ষা বোর্ড সভার গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্যসূচি ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সম্পূর্ণ অর্থ ফেরতের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

সম্পর্কিত বিষয়: