গ্রেপ্তারি পরোয়ানাপ্রাপ্তদের তালিকায় বর্তমান ও সাবেক ২৩ সেনা কর্মকর্তা

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিস্ট সরকারের দীর্ঘ শাসনামলে বিরোধী দল ও মতের লোকদের গুম করে র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেল এবং জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টারে (জেআইসি) বন্দি রেখে নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এই দুই মামলায় সাবেক স্বৈরাচারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান করে ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলাতেই শেখ হাসিনা ও তার সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর নাম রয়েছে। অর্থাৎ প্রকৃত আসামির সংখ্যা ২৮। আসামিদের মধ্যে বর্তমান ও সাবেক ২৩ সামরিক কর্মকর্তার বাইরে রয়েছেন ৫ বেসামরিক নাগরিক। তারা হলেন- শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি ও র্যাবের ডিজি বেনজির আহমেদ , র্যাবের সাবেক দুই ডিজি পুলিশ কর্মকর্তা এম খুরশিদ হোসেন এবং ব্যারিস্টার মো. হারুন-অর- রশিদ।
বুধবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ অভিযোগ আমলে নেন। একইসঙ্গে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
আসামিদের মধ্যে ২৩ সামরিক কর্মকর্তা হলেন- শেখ হাসিনার সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী ও মেজর জেনারেল হামিদুল হক।
অপর সেনা কর্মকর্তারা হলেন- মেজর জেনারেল মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম (অব.), মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, কর্নেল কে এম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুব আলম, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ খায়রুল ইসলাম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মখছুরুল হক (অব.)।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন সংশোধিত আইন অনুযায়ী তারা কোনো পদে থাকতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলে বহু মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে শতাধিক মানুষের এখনো খোঁজ মেলেনি। কাউকে হত্যার পর লাশও গুম করে ফেলা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার তীব্র গণআন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর গোপন বন্দিশালা থেকে মুক্তি পেয়েছেন গুমের শিকার বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাশেম ও আবদুল্লাহিল আমান আযমী তাদের মধ্যে অন্যতম।
এসব ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গুমের এ দুই মামলা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সকালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।
সূত্র: আমার দেশ