এক মাসে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ৪৮ হাজার

গত এক মাসে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে সারাদেশে মোট ৪৮ হাজার ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৯ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত এই ৩১ দিনে প্রতিদিন গড়ে ১,৫৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়—যা পূর্বের ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযানের দৈনিক গড় গ্রেপ্তারের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রভাব
সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের দেশত্যাগের পর থেকেই গ্রেপ্তারের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বাড়তে থাকে। বিশেষ করে ১২ মে আওয়ামী লীগ এবং এর সব সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান আরও তীব্র হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এবং গোয়েন্দা শাখার তথ্যমতে, শুধুমাত্র গত এক মাসে ১৭৫ জনের বেশি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন, যার মধ্যে বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্যও রয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—মমতাজ বেগম (মানিকগঞ্জ-২), জেবুন্নেসা আফরোজ (বরিশাল-৫), কাজী মনিরুল ইসলাম মনু (ঢাকা-৫), জাফর আলম (কক্সবাজার-১), আমিরুল আলম মিলন (বাগেরহাট-৪), সেলিনা ইসলাম (সংরক্ষিত আসন-৪৯, কুমিল্লা) ও শামীমা শাহরিয়ার (সংরক্ষিত আসন-২১, সুনামগঞ্জ)।
৯ মে নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভিকে। ঢাকার বাইরেও আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে তৎপরতা ও গ্রেপ্তার
ডিএমপি জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও সমমনা সংগঠনের সদস্যরা পুলিশের গতিবিধি লক্ষ্য রেখে ঝটিকা মিছিলের আয়োজন করে এবং তা সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে। এসব ছবি ও ভিডিও দেখে পুলিশ তাদের শনাক্ত করছে। গুলিস্তানে ১৮ মে এক ঝটিকা মিছিল থেকে ১১ জন এবং ১৯ মে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আরও ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও অভিযান
রাজনৈতিক গ্রেপ্তারের পাশাপাশি, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দমনে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজারে থানা পুলিশের অভিযানে ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে ছিনতাইকারী, মাদক চোরাকারবারি ও ওয়ারেন্টভুক্ত গ্যাং সদস্য রয়েছে।
কারাগারে চাপ বাড়ছে
কারা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, যদিও জামিনে মুক্তির হার বেড়েছে, তবুও কিছু কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি সংখ্যা বাড়ছে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল হোসেন জানান, এক মাসে বন্দির সংখ্যা ৪,৫০০ থেকে বেড়ে ৫,৫০০ ছাড়িয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (অপারেশন) শাহজাদা মো. আসাদুজজামান বলেন, “নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্যরা গোপনে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে পুলিশের সক্রিয় অভিযানে গ্রেপ্তারের সংখ্যা বেড়েছে।”
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এ এক মাসে ৩০ হাজার জন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যার মধ্যে ১২ হাজার ৫০০ জনকে ওই বিশেষ অভিযানের আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমান পরিস্থিতি তা থেকেও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বলে অনেকেই মনে করছেন।