ঘূর্ণিঝড়–বন্যা মোকাবিলায় সতর্কতায় রক্ষা পেয়েছেন ৯০ হাজার মানুষ

ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আগাম পূর্বাভাসভিত্তিক প্রস্তুতি কার্যক্রম দিন দিন ফলপ্রসূ হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত ‘সুফল-টু’ ও ‘স্টেপ’ প্রকল্পের আওতায় দেশের উত্তর ও উপকূলীয় অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী দুর্যোগের আগেই সহায়তা পেয়ে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে পেরেছে। প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৫ হাজার পরিবারকে বন্যা ও বজ্রপাতের পূর্বাভাস মোবাইল ভয়েস কলের মাধ্যমে জানানো হয়েছে এবং ২ হাজার ৯৫৫টি পরিবার আগাম আর্থিক সহায়তা পেয়েছে। এর ফলে, ২৩টি ইউনিয়নের প্রায় ৯০ হাজার ৭০০ মানুষ দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে সক্ষম হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে প্রকল্প দুটির যৌথ সমাপনী কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে জানানো হয়, প্রকল্প দুটির মাধ্যমে হাজার হাজার পরিবার দুর্যোগের আগেই প্রস্তুতি নিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমিয়ে আনতে পেরেছে।
ঝুঁকিতে থাকা মানুষ আগেই পেয়েছে সহায়তা
সুফল-টু প্রকল্পটি কেয়ার বাংলাদেশের নেতৃত্বে বাস্তবায়ন করে কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ও রাইমস। এই প্রকল্প কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনায় বন্যা ও বজ্রপাতের আগাম পূর্বাভাসের ভিত্তিতে কাজ করে।
অন্যদিকে যা “বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় প্রবণ উপকূলীয় অঞ্চলে পূর্বাভাস ভিত্তিক প্রাথমিক কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ (স্টেপ)” প্রকল্পটি কনসোর্টিয়ামের অংশীদার সংস্থা কোরডেইড, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং ইউনাইটেড পারপাসের সহায়তায় উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড়প্রবণ বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় বাস্তবায়িত হয়েছে।
কর্মশালায় জানানো হয়, সুফল-টু প্রকল্পে প্রায় ২৫ হাজার পরিবারকে মোবাইল কলের মাধ্যমে দুর্যোগের পূর্বাভাস জানানো হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৯৫৫টি পরিবার আগাম আর্থিক সহায়তাও পেয়েছে। এছাড়া স্টেপ প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার ৩৮১টি পরিবার নিজস্ব আগাম পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন করেছে।
‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো গেছে’
কেয়ার বাংলাদেশের প্রোগ্রাম পরিচালক এমেবেট মেন্না বলেন, “সুফল ও স্টেপ প্রকল্প প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে এসে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দেশের উত্তরের ও দক্ষিণের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছেছে।”
সরকারি পর্যায়ে অন্তর্ভুক্তির আশ্বাস
কর্মশালার প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদুল হক। তিনি বলেন, “সুফল ও স্টেপ প্রকল্পের উদ্যোগকে সরকার প্রশংসা করে। জাতীয় পর্যায়ে এগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে ইতোমধ্যে কিছু কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে।”
অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার(এসিএফ) এর ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর তপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, “সব অংশীজনের আন্তরিক সহযোগিতায় এই দুই প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। আমরা সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।”
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব (ত্রাণ) মো. রবিউল ইসলাম, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মমিনুল ইসলাম এবং কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী ডা. মেরি রাশিদ।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. আব্দুল ওয়াজেদ। পরে অনুষ্ঠিত হয় একটি আলোচনা পর্ব, যেখানে অংশগ্রহণ করেন সরকারের কর্মকর্তা, আবহাওয়াবিদ, কৃষি বিশেষজ্ঞ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা। কর্মশালায় সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।