সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশিত: ১৫:২৫, ১৩ জুলাই ২০২৫

থাকছে না ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’, যুক্ত হবে ‘জুলাই কোটা’

থাকছে না ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’, যুক্ত হবে ‘জুলাই কোটা’
সংগৃহীত

সদ্য প্রকাশিত এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জন্য একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে খুব শিগগিরই। এবারের (২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ) ভর্তি প্রক্রিয়ায় আসতে পারে বড় ধরনের পরিবর্তন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তুতকৃত খসড়া নীতিমালায় বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে কোটা বণ্টন ব্যবস্থা, যেখানে একদিকে নতুন একটি ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোটা’ যুক্ত হওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে, অন্যদিকে বাতিল করা হতে পারে বহুল আলোচিত ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’।

রবিবার (১৩ জুলাই) শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চূড়ান্ত করতে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি নীতিমালার অনুমোদন দেওয়া হতে পারে।

নতুন কোটা: ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’

২০২৪ সালের ২৪ জুলাই সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত হওয়া বা শহীদদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ কোটা রাখার প্রস্তাব এসেছে খসড়া নীতিমালায়। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অনেক শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে অসুস্থ অবস্থায়, অনেকে আশানুরূপ ফলাফল করতে পারেনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, “এই শিক্ষার্থীরা যেন বঞ্চিত না হয়, সেজন্য সীমিত আকারে কোটা প্রবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছে। তবে এটি সাময়িক হতে পারে—মাত্র দুই বা তিন বছরের জন্য এই কোটা বহাল রাখা হতে পারে।”

এর আগে স্কুল পর্যায়েও জুলাই আন্দোলনে আহত বা শহীদ পরিবারের জন্য প্রতিটি শ্রেণিতে একটি করে আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল। এখন কলেজ পর্যায়েও তেমন ধারা অনুসরণ করা হতে পারে।

 

মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সুপারিশ

অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটা’ এ বছর থেকে বাতিল করার সুপারিশ করেছে কয়েকটি শিক্ষা বোর্ড। তাদের মতে, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের কলেজে ভর্তির বয়সসীমা অনেক আগেই পার হয়েছে। এছাড়া ২০২৪ সালের উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা সুবিধা ইতিমধ্যেই বাতিল হয়েছে।

 

ঢাকা বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ভর্তির বয়স নেই। তাই এই কোটা রাখার যৌক্তিকতা আর নেই।” একইসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য থাকা ২ শতাংশ ‘পোষ্য কোটা’ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

 

চলমান কোটাব্যবস্থা (২০২৪ নীতিমালা অনুযায়ী)

মেধা কোটা: ৯৩%

মুক্তিযোদ্ধা কোটা: ৫%

পোষ্য কোটা (শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের জন্য): ২%

 

এই পুরনো কাঠামোতে এবার ব্যাপক রদবদলের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

ভর্তির পরও শূন্য থাকবে প্রায় ২০ লাখ আসন

চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাস করেছেন ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী। অথচ দেশের ৯ হাজার ১৮১টি কলেজ ও আলিম মাদরাসায় ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ২২ লাখ। পলিটেকনিক ও কারিগরি বোর্ডসহ এইচএসসি পর্যায়ে মোট আসন রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩৩ লাখ।

অর্থাৎ, সব উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও সাড়ে ২০ লাখ আসন শূন্য থাকবে। ফলে ভর্তির জন্য কলেজ সংকট না থাকলেও, মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পেছনে শিক্ষার্থীদের দৌড়ঝাঁপ বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, “সকল শিক্ষার্থী মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চায়, যা স্বাভাবিক। তবে যেসব কলেজ মান ধরে রাখতে পারছে না, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে পাঠদান অনুমোদনও বাতিল করা হতে পারে।

সম্পর্কিত বিষয়: