এইচআরডব্লিউ
মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ অন্তর্বর্তী সরকার

বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো বড় ধরনের উন্নয়ন হয়নি বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংস্থাটি বলছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এখনও মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) এক বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউ জানায়, শেখ হাসিনার সরকারের সময় যে ধরনের ভয় ও দমন-পীড়ন ছিল, তা কিছুটা কমেছে। কিন্তু বিরোধী দল দমন, বিচারবহির্ভূত কাজ ও হেফাজতে মৃত্যু বন্ধ হয়নি।
এইচআরডব্লিউ-এর এশিয়া বিভাগের উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, এক বছর আগে যারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের স্বপ্নে আন্দোলনে নেমেছিলেন, সেই স্বপ্ন এখনও পূরণ হয়নি। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার এক ধরনের অচলাবস্থায় আটকে আছে।
তিনি বলেন, সংস্কারবিহীন নিরাপত্তা বাহিনী কখনো চরমপন্থী, আবার কখনো প্রতিশোধপরায়ণ রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে ২০২৪ সালের শুরুতে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এতে বিচারব্যবস্থা, পুলিশ, মানবাধিকার, নারী অধিকার, রাজনৈতিক সংলাপসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু এইচআরডব্লিউ জানায়, এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি নেই। বরং সরকার এখনো কঠিন সংকটে আছে এবং জনসুরক্ষা ব্যবস্থা স্বচ্ছতার অভাবে ভুগছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে রংপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৪টি বাড়ি ভাঙচুর হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামেও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়। ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে ‘ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি’র সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হন। এরপর পুলিশ অজ্ঞাত ৮ হাজার ৪০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে। একইভাবে ৬ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৯২ হাজার ৪৮৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এর মধ্যে ৪০০ জনের বেশি সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীও রয়েছেন।
এইচআরডব্লিউ জানায়, শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই ৩ আগস্ট তার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হবে। কিন্তু বেশিরভাগ মামলায় কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। সংস্থাটি বলছে, সরকার এখনো পুরনো ‘স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট’ ব্যবহার করে মানুষকে নির্বিচারে গ্রেফতার করছে। ফেব্রুয়ারির ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এ ৮ হাজার ৬০০ জনকে আটক করা হয়। কিন্তু এখনো নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু ৬০ জন পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ অভিযানে র্যাবসহ একাধিক ইউনিট জড়িত ছিল। সরকার ২৭ আগস্ট গুমের ঘটনা তদন্তে একটি কমিশন গঠন করে। আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ সনদেও সই করে। কিন্তু কমিশন জানিয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত ১,৮০০ অভিযোগ পেয়েছে। কিন্তু পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনী প্রমাণ লোপাট করছে এবং তদন্তে সহায়তা করছে না। জাতিসংঘের ১৩২৫ নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী নারীর নিরাপদ ও সমান অংশগ্রহণ এখনো নিশ্চিত হয়নি।
এইচআরডব্লিউ বলছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ার উদ্যোগও ফলপ্রসূ হয়নি। সরকার কোনো সুপারিশ কার্যকর করেনি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়। তবে যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তাদের বিচার নিশ্চিত করাও জরুরি।
সংস্থাটি মনে করে, বাংলাদেশে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের জন্য মানবাধিকার পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন প্রয়োজন। তা না হলে রাজনৈতিক সহিংসতা ও দমন-পীড়ন অব্যাহত থাকবে।