বুধবার ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:১১, ৭ অক্টোবর ২০২৫

নির্বাচন ঘিরে সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তিন নর্ডিক রাষ্ট্রদূতের গোপন বৈঠক

নির্বাচন ঘিরে সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তিন নর্ডিক রাষ্ট্রদূতের গোপন বৈঠক
ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তিন নর্ডিক দেশের রাষ্ট্রদূত গোপন বৈঠক করেছেন।

ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন আরাল্ড গুলব্রানসেন, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস লিনাস রাগনার উইকস ও ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মলার সোমবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে সাবের হোসেন চৌধুরীর নিজ বাসভবনে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে অংশ নেন। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র “কালবেলা”-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বৈঠকের গোপনীয়তা

সূত্র জানায়, বৈঠকটি শুরু হয় দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে এবং শেষ হয় বিকেল ৫টার দিকে। তিন রাষ্ট্রদূত একই গাড়িতে ফ্ল্যাগ ছাড়া প্রবেশ করেন এবং বৈঠক শেষে বিকল্প রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যান, যাতে কাউকে টের না দিতে হয়। সাধারণত কূটনৈতিক সাক্ষাতে এ ধরনের সতর্কতা অনুসরণ করা হয় না।

আলোচনার মূল বিষয়

বৈঠকে নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা করছে কিনা— তা জানতে চান কূটনীতিকরা। পাশাপাশি কীভাবে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা সম্ভব, সে বিষয়েও আলোচনা হয়।

সূত্র বলছে, নর্ডিক কূটনীতিকরা মনে করেন— আওয়ামী লীগের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতৃত্ব যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়, তাহলে বিদেশি পক্ষ থেকে তেমন কোনো আপত্তি থাকবে না। বরং এতে নির্বাচনের মাঠে সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত হবে। তবে বৈঠক শেষে কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করেনি।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর তিনি ভারতে আশ্রয় নেন এবং নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে, ফলে দলটি রাজনৈতিক অঙ্গনে কার্যত নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে। বহু নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন বা বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

সাবের হোসেন চৌধুরীও ২০২৪ সালের অক্টোবরে গুলশান থেকে গ্রেপ্তার হন। পরে জামিনে মুক্তি পান। পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সময় থেকেই নর্ডিক দেশগুলোর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

এর আগে গত ১১ মে তার বাসায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গেও গোপনে বৈঠক করেন সাবের হোসেন। ওই বৈঠকেও দলটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গিয়েছিল।

নর্ডিক দেশগুলোর ভূমিকা

নরওয়ে, সুইডেন ও ডেনমার্ক স্ক্যান্ডিনেভিয়ান রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে এ দেশগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

এই বিষয়ে জানতে সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

জনপ্রিয়