রোববার ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২ ভাদ্র ১৪৩২

নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:৫৭, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কুমিল্লায় তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার উপর গোলটেবিল বৈঠক

কুমিল্লায় তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার উপর গোলটেবিল বৈঠক
সংগৃহীত

কুমিল্লায় 'তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার উপর মুক্ত আলোচনা' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার(৬ সেপ্টেম্বর) সকালে অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তাওহীদের পক্ষ থেকে জেলার জমজম টাওয়ারের গোল্ডেন স্পুন হোটেলে এই আয়োজন করা হয়।

গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপন করেন হেযবুত তওহীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক উপ-সম্পাদক রাকিব আল হাসান। তিনি সংগঠনটির সর্বোচ্চ নেতা হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের রচিত ‘তওহীদভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা’ গ্রন্থের আলোকে একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রব্যবস্থার রূপরেখা তুলে ধরেন। সেইসাথে বর্তমানে রাষ্ট্রের অস্থির পরিস্থিতি ও প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থার বিভিন্ন ত্রুটি তুলে ধরে তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের সমাজ আরবের আইয়ামে জাহেলিয়াতকে হার মানিয়েছে। মব কালচারের কারনে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। কবর থেকে মৃত মানুষের লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যা জাহেলিয়াতকে হার মানিয়েছে। রাষ্ট্রব্যবস্থায় সুদ ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চলমান রয়েছে। এই ব্যবস্থা গুটিকয়েক মানুষ সুবিধা ভোগ করে। পুঁজিপতিরা আরে ধনবান হয় আর সাধারণ মানুষ ভুক্তভোগী হয়। বিচার ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত মামলার জট বাড়ছে। মিথ্যা মামলা, মিথ্যা স্বাক্ষ্য ও ত্রুটিযুক্ত বিচার ব্যবস্থার কারনে মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক সময় নিরপরাধ ব্যক্তি বছরের পর বছর কারাগারে থাকার পর নির্দোষ প্রমানিত হয়ে নিজেদের জীবনের মূল্যবান সময় হারিয়ে ফেলছেন।

শিক্ষা ব্যবস্থার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায় সেটা অশিক্ষিত নয় বরং শিক্ষিত মানুষের মাধ্যমে হচ্ছে। বৃটিশদের বিভক্তিকরন নীতি ও কেরানী শিক্ষা ব্যবস্থার কারনে আজ এই অবস্থা। বৃটিশ প্রভূরা মাদ্রাসা শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে জাতিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। আর সাধারণ কেরানি শিক্ষা ব্যবস্থার কারনে মানুষ নীতি-আদর্শ বিবর্জিত স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক হচ্ছে। যে কারনে তারা নিজেদের স্বার্থে দেশের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করতেও দ্বিধাবোধ করে না।

এভাবে তিনি প্রচলিত রাষ্ট্রনীতি, বিচারব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা সহ বিভিন্ন বিষয়ে ত্রুটি তুলেধরে তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মাধ্যমে সমাধানের বিষয়ে আলোকপাত করেন। দেশে চলমান মবকালচার, নিরাপত্তাহীনতা, অন্যায়, দূর্নীতি বন্ধ করতে শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে হেযবুত তাওহীদের প্রস্তাবনার বিস্তারিত জানতে 'তওহীদভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা' বইটি পড়ার অনুরোধ রাখেন।

কুমিল্লা জেলা হেযবুত তাওহীদের সভাপতি মোঃ ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় আমির মাহবুব আলম।

তিনি বলেন, মানুষ আল্লাহ সৃষ্টি। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজবদ্ধ ভাবে থাকতে হলে একটি ত্রুটিমুক্ত নিখুঁত জীবনব্যবস্থা প্রয়োজন। যেটা মানুষের পক্ষে তৈরী করা সম্ভব নয়। 

কেন সম্ভব নয় সে বিষয়ে উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, মিষ্টি বিষয়ে যদি কাওকে আইন রচনা করতে বলা হয় তাহলে যিনি মিষ্টি পছন্দ করেন তিনি মিষ্টির উপকারীতা তুলে ধরে লিখবেন। অন্যদিকে মিষ্টির বিষয়ে যদি কোন ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তি লেখেন তাহলে তিনি মিষ্টির ক্ষতিকরক দিক তুলে ধরবেন। এভাবেই জীবনব্যবস্থা প্রনয়নের ক্ষেত্রেও মানুষ তার স্বভাবজাত চরিত্রের কারনে নিজের সুবিধা বিবেচনা করবে। যে কারনে আল্লাহর দেওয়া ত্রুটিমুক্ত জীবন ব্যবস্থা ছাড়া মানুষের তৈরী বিধান দিয়ে কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সংবিধানে ১৭ বার পরিবর্তন আনা হলেও তা জাতিকে কাঙ্ক্ষিত শান্তি দিতে পারেনি, কারণ মানুষের তৈরি এই ব্যবস্থা অসম্পূর্ণ ও দুর্বল। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে আল্লাহর হুকুমের ভিত্তিতে একটি তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।   আর এই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করলে যে শান্তি আসবে তার বাস্তব প্রমান রাসুলুল্লাহ সাঃ এর  সেই শাসনামল। যেই আদর্শের কারনে জাহেলিয়াতের নিমজ্জিত সেই সমাজের বর্বর মানুষগুলো সোনার মানুষে পরিনত হয়েছিলো। 

'তওহীদভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা’ গ্রন্থের আলোকে রাষ্ট্রব্যবস্থার রূপরেখা তুলে ধরার শেষে গোলটেবিল বৈঠক উপস্থিত বিভিন্ন অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবী, ইসলামী চিন্তাবিদ, প্রবীন রাজনীতিবিদ ও প্রথিতযশা সাংবাদিকেরা সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ প্রদান করেন।

গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদ কুমিল্লা অঞ্চলের আমির মো. সাইফুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. মানিক মিয়া, চট্টগ্রাম বিভাগীয় নারী নেত্রী জোবেদা আক্তার বেবী, কুমিল্লা অঞ্চলের নারী নেত্রী আসমা আক্তার, কুমিল্লা জেলা নারী নেত্রী সেলিনা আক্তার ইতি প্রমুখ।

সম্পর্কিত বিষয়: