শনিবার ০৩ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

ভোলা প্রতিনিধি :

প্রকাশিত: ১১:০৯, ১১ জানুয়ারি ২০২৫

খাস জমিতে আ.লীগ নেতার রিসোর্ট, বিএনপি নেতা করলেন দখল

খাস জমিতে আ.লীগ নেতার রিসোর্ট, বিএনপি নেতা করলেন দখল
সংগৃহীত

চরফ্যাশন উপজেলায় তারুয়া সমুদ্র সৈকতের তীরে সরকারি খাস জমি দখল করে অবৈধভাবে ‘সোনিয়া রিসোর্ট’ নামের একটি রিসোর্ট নির্মাণ করেছিলেন ঢালচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা মেম্বার।

সেই রিসোর্টি দখলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এবার ঢালচর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি জাহাঙ্গীর মাতব্বরসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন প্রধান অভিযুক্ত বিএনপি নেতারা।

তারুয়া সমুদ্র সৈকতের সোনিয়া রিসোর্ট দখলের অভিযোগের ৪ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে। 

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর সোনিয়া রিসোর্ট ও হাচনা ভাতের হোটেল ছেড়ে দেয়ার জন্য তাকে ৩ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন ঢালচর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি জাহাঙ্গীর মাতাব্বরসহ স্থানীয় অন্যান্য বিএনপি নেতারা। তাদের বেঁধে দেয়া ৩ দিন সময়ের পর গত ২৬ ডিসেম্বর রিসোর্টটি দখলে নেন তারা।

হাসান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা মেম্বারের দাবি,২০১৯ সালে ঢালচর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মূল সড়কের পাশে তারুয়া সমুদ্র সৈকতের তীরে সরকারি খাস জমিতে সোনিয়া রিসোর্টটি নির্মাণ করেন ঢালচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৭নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো.মোস্তফা। এরপর থেকে রিসোর্টটি পরিচালনা করে আসছিল তার ভাতিজা মো.হাসান। রিসোর্টের পাশেই হাসান নিজেও একটি ভাতের হোটেলে এবং চায়ের দোকান তোলেন।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে আত্নগোপনে চলে যান রিসোর্টের মূল মালিক মোস্তফা মেম্বার। মোস্তফা মেম্বার আত্নগোপনে গেলে রিসোর্টের দায়িত্ব থাকা তার ভাতিজা হাসানকে রিসোর্ট ও ভাতের হোটেল ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন অভিযুক্ত বিএনপি নেতারা,সর্বশেষ গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর রিসোর্ট দখলে নেন তারা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিও সম্পর্কে কথা হয় অভিযোগকারী হাসানের সাথে,তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “ঢালচর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি জাহাঙ্গীর মাতাব্বরের নেতৃত্বে তারুয়া সমুদ্র সৈকতের তীরে আমাদের সোনিয়া রিসোর্ট ও হাচনা ভাতের হোটেল গত ২৬ ডিসেম্বর দখল করেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। এরপর আমাকে তারা রিসোর্ট থেকে বের করে দেন। পরে তারা আমার ব্যবহৃত দুটি সিমকার্ড রেখে দেন,যে নাম্বার দুটি পর্যটকদের কাছে রয়েছে।পরবর্তীতে আমি ঢালচর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে জানালে পুলিশ এসে আমার সিমকার্ড দুটি তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া রিসোর্টটি দখলে নেয়ার বিষয়ে আমি যাতে কারো সামনে মুখ না খুলি, সে মর্মে আমার কাছ থেকে তারা জোর করে ভিডিও জবানবন্দিও নেন।”

ঢালচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা মেম্বার গণমাধ্যমকে বলেন, “সোনিয়া রিসোর্ট আমার। রিসোর্ট এখন আমার আয়ত্তে নেই,আমার ভাতিজা হাসানকে দিয়ে পরিচালনা করাতাম। ঢালচর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর মাতাব্বরের নেতৃত্বে সহ-সভাপতি মনির বেপারি,আলী আসাদ মাস্টার ও কামাল চৌধুরী আমার রিসোর্ট দখল করে নিয়েছে,এখন তারা ব্যবসা করছেন। আমার অপরাধ আমি আওয়ামী লীগ করি।”

তিনি আরও বলেন, “আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি তারা দখল করে নেওয়াতে আমি বিরাট লসে আছি। ব্যাংক থেকে ১৪ লক্ষ টাকা ঋণ করে রিসোর্ট বানিয়েছি,ব্যাংক এখনও ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পাবে।এখন ব্যাংকের কিস্তির পরিশোধের ভয়ে আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। তিনি আরও বলেন,সরকারি খাস জমিতে রিসোর্ট বানিয়েছি।”

সোনিয়া রিসোর্ট দখল ও হাসানের কাছ থেকে জোরপূর্বক ভিডিও বক্তব্য নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ঢালচর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি জাহাঙ্গীর মাতাব্বর গণমাধ্যমকে বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা।” তিনি উল্টো প্রশ্ন করে জানতে চাইলেন, “আমি কী এদেশের অনেক বড় কেউ? সোনিয়া রিসোর্ট এখন তার দখলে আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর বলেন, “লোকজন আছে,কতো লোক'ই আছে।আমি ওখানে কেন যাব,আর কেন দখল নিতে যাব।”

সোনিয়া রিসোর্টটি দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢালচর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, “এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি।অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট থানাকে জানাবো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।”

সরকারি খাস জমি দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ সোনিয়া রিসোর্টের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি-না জানতে চাইলে চরফ্যাশন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি গণমাধ্যমকে বলেন, “খাস জমিতে রিসোর্ট তৈরীর বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তদন্ত করে সত্যতা পেলে অবৈধ রিসোর্টের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”