মঙ্গলবার ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২

সংবাদ পরিক্রমা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:২২, ২১ অক্টোবর ২০২৫

১০ শিল্পগোষ্ঠীর তালিকা থেকে জেমকন বাদ, যোগ হল প্রিমিয়ার

১০ শিল্পগোষ্ঠীর তালিকা থেকে জেমকন বাদ, যোগ হল প্রিমিয়ার
ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য এবং ১০টি শিল্পগোষ্ঠীর পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে রাষ্ট্রের তিন সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত যৌথ তদন্ত টিমের তদন্তাধীন তালিকা থেকে জেমকন গ্রুপকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আর নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. এইচ বি এম ইকবালের প্রিমিয়ার গ্রুপকে। যৌথ তদন্ত দলের আওতায় থাকা শিল্পগোষ্ঠীগুলো হলো- বসুন্ধরা গ্রুপ, বেক্সিমকো, এস আলম, নাবিল, নাসা, ওরিয়ন, সিকদার, আরামিট, সামিট এবং নবযুক্ত প্রিমিয়ার গ্রুপ। এসব গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও রয়েছে তদন্তের তালিকায়।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবার এবং ১০ শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থপাচার, কর ও শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। বিদেশে টাকা পাচার করে সেই অর্থে ব্যবসার মালিকানা এবং ফ্ল্যাট ও বাড়ি কেনায় বিনিয়োগ করার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। অর্থপাচার করা সম্পদ উদ্ধারে এই যৌথ উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের সঙ্গে রয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই তিন সংস্থার কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছে অর্থপাচার প্রতিরোধে কাজ করা আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

নতুন সিদ্ধান্তের বিষয়ে গতকাল সোমবার দুদকের মহাপরিচালক (মানিলন্ডারিং) মো. মোকাম্মেল হক বলেন, প্রিমিয়ার গ্রুপের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থপাচার এবং কর ও শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ তদন্তে চার সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। দলের নেতৃত্বে রয়েছেন দুদকের উপপরিচালক মো. হোসাইন শরীফ। এই দলে সিআইডি ও এনবিআর কর্মকর্তারাও অন্তর্ভুক্ত হবেন। তবে প্রিমিয়ার গ্রুপের নামটি যৌথ তদন্ত কাঠামোয় নতুনভাবে যুক্ত হচ্ছে, নাকি অন্য কোনো গ্রুপের পরিবর্তে সংযুক্ত করা হচ্ছে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানাতে পারেননি। তারাও তদন্তের আওতায় থাকবে।

নাম প্রকাশ না করে টিমের আরেক কর্মকর্তা জানান, জেমকন গ্রুপকে তদন্তের বাইরে রাখা হয়নি বা ছাড় দেওয়া হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের মানিলন্ডারিং বা আর্থিক অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই তাদের বিষয়টি এখন যৌথ তদন্তের বদলে দুদকের একক অনুসন্ধান পর্যায়ে দেখা হবে।

দুদকের মহাপরিচালক মোকাম্মেল বলেন, তিন সংস্থার সমন্বয়ে যৌথ টিম অনুসন্ধান চালালেও এসব ক্ষেত্রে মামলা হবে দুদকে। পরবর্তী সময়ে দুদকেরই তদন্তের মাধ্যমে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।

দুদকের ১১ যৌথ তদন্ত টিম : যৌথ তদন্ত টিমের সদস্যরা এখন পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৭৬টি মামলা দায়ের করেছে। এ ছাড়া আরও বেশকিছু মামলা দায়েরের প্রস্তুতি রয়েছে।

শেখ হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে যৌথ তিন সংস্থা। এই টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন দুদকের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম। তিনি উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। দলে রয়েছেন সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর, এস এম রাশেদুল হাসান, আতিয়া মোবাশ্বেরা তমা, মনিরুল ইসলাম এবং উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন। এর মধ্যে আব্দুল্লাহ আল মামুনকে সম্প্রতি সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

যৌথ তদন্ত কাঠামোর আওতায় শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দুদক মোট ১৮টি মামলা করেছে যার তদন্ত চলমান। এর মধ্যে ছয়টি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।

বসুন্ধরা গ্রুপ: এই গ্রুপের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন, যিনি বদলি হওয়া উপপরিচালক শেখ গোলাম মাওলার স্থলাভিষিক্ত। দলের সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক মো. সাজিদ-উর-রোমান ও মো. মাহমুদুল হাসান ভূঁইয়া। তবে এখনও কোনো মামলা দায়ের হয়নি।

বেক্সিমকো গ্রুপ: বেক্সিমকো গ্রুপের অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্বে আছেন দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন। দলে রয়েছেন উপপরিচালক সাজ্জাদ হোসেন ও মিনহাজ বিন ইসলাম। এখন পর্যন্ত দুদক বেক্সিমকোর বিরুদ্ধে ৩টি এবং সিআইডি ১৭টি মামলা করেছে।

প্রিমিয়ার গ্রুপ: এইচবিএম ইকবালের প্রিমিয়ার গ্রুপের অভিযোগ অনুসন্ধানে দলনেতা উপপরিচালক হোসাইন শরীফ। তার সঙ্গে রয়েছেন উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, সহকারী পরিচালক আজগর হোসেন ও উপসহকারী পরিচালক সাবরিনা জামান।

নাবিল গ্রুপ: নাবিল গ্রুপের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদকের উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত দল। সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান ও হাবিবুর রহমান। তারা এখন পর্যন্ত দুটি মামলা করেছেন।

নাসা গ্রুপ: নাসা গ্রুপের অনুসন্ধান দলের নেতৃত্বে আছেন দুদকের উপপরিচালক মো. রাউফুল ইসলাম। দলের অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক সোহাকুল ইসলাম ও মো. আব্দুল মালেক। তারা এখন পর্যন্ত চারটি মামলা করেছেন।

ওরিয়ন গ্রুপ: ওরিয়ন গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করছেন দুদকের উপপরিচালক মো. রাশেদুর রহমান। তার দলে রয়েছেন মো. মেহেদী মুসা জেবিন ও খোরশেদ আলম। এখনও কোনো মামলা হয়নি।

এস আলম গ্রুপ: এস আলম গ্রুপের তদন্তে দায়িত্বে আছেন দুদকের উপপরিচালক তাহসিন মুনাবীল হক। সহকারী পরিচালক মো. ইসমাঈল ও মাহমুদুল হাসান এই দলের সদস্য। তারা এখন পর্যন্ত ১৬টি মামলা করেছেন।

সিকদার গ্রুপ: সিকদার গ্রুপের অনুসন্ধানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দুদকের পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদ। তার সঙ্গে আছেন সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমান ও মো. কামিয়াব আফতাহি উন নবী। তারা এখন পর্যন্ত সাতটি মামলা করেছেন।

সামিট গ্রুপ: সামিট গ্রুপের অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্বে আছেন দুদকের উপপরিচালক আলমগীর হোসেন। সঙ্গে রয়েছেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম ও মো. নাসরুল্লাহ হোসাইন। তদন্ত শেষে তারা একটি মামলা দায়ের করেছেন, যা বর্তমানে তদন্তাধীন।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ: সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের দায়িত্ব প্রথমে ছিল দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধানের হাতে। তার বদলির পর দায়িত্ব পান উপপরিচালক মশিউর রহমান। দলের অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক মো. মাইনউদ্দীন ও মুহা. শোয়াইব ইবনে আলম। এখন পর্যন্ত ১১টি মামলা করেছেন তারা।

সূত্র: আমাদের সময়

জনপ্রিয়

শীর্ষ সংবাদ: