শুক্রবার ২২ আগস্ট ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশিত: ১৪:৩৪, ২২ আগস্ট ২০২৫

মুরগি–গরু–মাছের বাজারে আগুন, হাঁসফাঁস ক্রেতাদের!

মুরগি–গরু–মাছের বাজারে আগুন, হাঁসফাঁস ক্রেতাদের!
সংগৃহীত

‘বেতন সামান্য, সংসার চালাতেই কষ্ট। বাজারে এলে মনে হয় আগুন লেগেছে—মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সবজির দাম হাতের বাইরে।’ ক্ষোভের সঙ্গে এমনই কথা বললেন রামপুরা বাজারে কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী রফিকুল আলম।


শুধু রফিক নয় - সাধারণ মধ্য ও নিম্নবিত্ত ক্রেতাদের ভাষ্য, মুরগি, ডিম, মাংস-মাছসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দামই এখন ঊর্ধ্বমুখী। বলা চলে অনেকটাই ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। তাই বাজারে এসে হা-হুতাশ করা ছাড়া উপায় নেই সাধারণ ক্রেতাদের। 


তারা বলছেন, গত কয়েকমাস স্থিতিশীল ছিল নিত্যপণ্যের বাজার। তবে গত জুলাই থেকে ফের বাড়তে শুরু করে দাম। বাড়তে বাড়তে এখন সেটি ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে।


বাজার করতে আসা ক্রেতাদের মুখে অসন্তোষের স্পষ্ট সুর থাকলেও বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে তারাও বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, ব্যবসায়ীরা কৌশলে ছুটির দিনে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন, ফলে সীমিত আয়ের পরিবারগুলো পড়ছে চরম বিপাকে।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সকালে বনশ্রী-রামপুরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।


সরেজমিনে দেখা গেছে, সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০–৩৪০ টাকায়, সাদা কক ৩০০ টাকা, লাল কক ২৮০–৩০০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬০০–৭০০ টাকায়।


শুধু মুরগিই নয়, ডিমের বাজারেও আগুন লেগেছে। গত এক মাস ধরে প্রতি সপ্তাহেই দাম বাড়ছে। বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও ছিল ১৪৫–১৫০ টাকা। সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৩৫–১৪০ টাকা। হাঁসের ডিমের দাম আরও বেশি, প্রতি ডজন ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, গরু ও খাসির মাংসের বাজারে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০–৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে মাছের বাজারে নতুন করে দাম না বাড়লেও আগের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের বাজারে এখনও অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকায়, ৫০০–৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ টাকা, ৭০০–৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং দেড় কেজি ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।
অন্যান্য মাছের মধ্যে বোয়াল প্রতি কেজি ৭৫০–৯০০ টাকা, কোরাল ৮৫০ টাকা, আইড় ৭০০–৮০০ টাকা, চাষের রুই ৩৮০–৪৫০ টাকা, কাতল ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০–২২০ টাকা, পাঙাশ ১৮০–২৩0 টাকা, কৈ ২০০–২২০ টাকা এবং পাবদা ও শিং ৪০০–৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চাষের ট্যাংরা ৭৫০–৮০০ টাকা, কাঁচকি ৬৫০–৭০০ টাকা এবং মলা ৫০০–৫৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।


বনশ্রী বাজারে পরিবারের জন্য সপ্তাহের বাজার করতে আসা গৃহিণী নাহিদা আক্তার বলেন, শাকসবজি, ডাল, মাছ, মাংস—সব কিছুর দামই একসঙ্গে বাড়ছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার কিনেছি ১৬৫ টাকায়, আজ দিতে হলো ১৮২ টাকা। এভাবে চলতে থাকলে মাসের শেষে টান পড়বেই।
বাজার করতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কামরুল হাসান বলেন, মাসখানেক আগেও ব্রয়লার ১৫০ টাকায় কিনেছি, আজ ১৮৫ টাকা চাইছে। গরু-খাসির মাংস তো অনেক আগেই হাতের বাইরে চলে গেছে, এখন মুরগিও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আপনি মাছের বাজারে গিয়েও শান্তি পাবেন না, মাছের দাম আকাশছোঁয়া। এভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকলে তো চলতেই পারব না।


ভোক্তারা মনে করছেন, সরবরাহ ব্যবস্থার ঘাটতি ও পর্যাপ্ত বাজার মনিটরিং না থাকার কারণেই এভাবে দাম বাড়ছে। তারা সরকারের কাছে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন, যাতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রাখা যায়।


এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মুরগির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। রামপুরা বাজারের মুরগি বিক্রেতা দিদার বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম দুই সপ্তাহ ধরে বাড়ছে। তবে সোনালি ও অন্যান্য মুরগির দাম কিছুটা ওঠানামা করছে। সরবরাহ বাড়লে দামও আবার কমে আসবে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা জানান, শুক্রবার পাইকারি বাজারেই দাম বেশি থাকে। যে কারণে আমরাও বাড়িয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হই। তবে শনি-রোববার দাম আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে।
বনশ্রী এলাকার এক খুচরা বিক্রেতা মো. সেলিম বলেন, আমাদের হাতে তো কিছু করার নেই। পাইকারিতে যেভাবে কিনি, সামান্য লাভ রেখে বিক্রি করি। দোষ যেন সবসময় খুচরা বিক্রেতাদের ওপর না চাপানো হয়।

 

সম্পর্কিত বিষয়: