কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫৬ নেতাকর্মীর পদত্যাগ

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটি থেকে ৫৬ জন নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) কিশোরগঞ্জ জেলা পাবলিক লাইব্রেরির সামনে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রায়ান জোহান।
জানা যায়, জেলা কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মিয়া ও সংগঠক উল্লাসকে সংগঠনের আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন ও সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্স স্বাক্ষরিত একটি বহিষ্কারাদেশ জারি করেন। এতে ‘সাংগঠনিক নীতি ও আদর্শবিরোধী কার্যক্রম’-এর অভিযোগ আনা হয়।
এই বহিষ্কার আদেশের প্রতিবাদে সংগঠনের আটজন যুগ্ম আহ্বায়ক, আটজন যুগ্ম সদস্য সচিব, চারজন সংগঠক, স্বাস্থ্য সেলের তিনজন এবং ৩৩ জন সাধারণ সদস্য পদত্যাগ করেন। তাদের অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বর্তমান নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রায়ান জোহান বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের কিশোরগঞ্জ জেলার বৈষম্যবিরোধী কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু দুঃখ হলেও সত্য যে কমিটি গঠনের পর থেকেই জেলা কমিটির দায়িত্বশীলদের মাঝে স্পষ্ট হয়ে ওঠে দায়িত্বহীনতা ভাব থেকে শুরু করে নানাবিধ অন্যায়-দুর্নীতির অভিযোগ। যে বা যারাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তাকেই করা হতে থাকে বহিষ্কার। গত ৩ মে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অন্যায় এবং মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন ভাই এবং সংগঠক উল্লাস ভাইকে বহিষ্কার করা হয়, যা স্পষ্টভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নৈতিকতার বিরোধ এবং আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিবের একক আধিপত্য এবং সৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। তারই পরিপেক্ষিতে এই অন্যায়-দুর্নীতি এবং সেচ্চাচারিতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে জেলা কমিটির ৫৬ জন পদত্যাগ করে।
অপরদিকে সংগঠনের আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন ও সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্স বলেন, জেলা কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মিয়া জুলাই আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রদের ওপর যারা হামলা করেছিল তাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে মামুনের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে কোনো কথা না বলে একটি হামলা-মামলা করেছে। সে মামলাতে যারা ছাত্রদের ওপর হামলা করেছিল তাদের নাম না দিয়ে ব্যক্তিগত আক্রোশে ব্যবসায়ী, মসজিদের ইমাম ও সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে মামলা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। যার অডিও-ভিডিও প্রমাণও আছে। তাই তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের যে সংখ্যা বলা হচ্ছে, তা অতিরঞ্জিত এবং বিভ্রান্তিকর। কারণ পদত্যাগ করেছে ৮ থেকে ১০ জন। আর যারা সংবাদ সম্মেলন করেছে, তাদের মধ্যে শুধু তিন থেকে চারজন কমিটিতে ছিল। বাকিরা কেউ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতেই নাই।
তবে বহিষ্কৃত জেলা কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মিয়া দাবি করে বলেন, তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত অডিও রেকর্ডটি ভুয়া এবং এটি তার সুনাম ক্ষুণ্ন ও নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র মাত্র।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৮ এপ্রিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিশোরগঞ্জ শাখার সদস্য সচিব মো. ফয়সাল প্রিন্স ও আরও দুই যুগ্ম সচিব এবং তিন যুগ্ম আহ্বায়ক স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
যেখানে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কাছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ‘মে দিবস’ উপলক্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে করা আবেদনের চিঠি ঘিরে সামাজিক যোগাযাগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সেখানে আর্থিক সহায়তা চেয়ে করা আবেদনের চিঠিতে দেখা যায়, আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা ‘মে দিবস’ উপলক্ষে একযোগে সারা জেলায় ১৫০০০ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। উক্ত উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য আপনার একান্ত সহযোগিতা কামনা করছি... উক্ত উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক এবং সার্বিক সহযোগিতা দানে আপনার সদয় মর্জি হয়।
চিঠিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্স, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ইয়াজ ইবনে জসিম, যুগ্ম সদস্য সচিব শামসুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক রাতুল নাহিদ ভূইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক আইনুল ইসলাম ঝলক ও যুগ্ম আহ্বায়ক মানস সরকারের সই থাকলেও আহ্বায়ক ইকরাম হোসেনের সই নেই।
সে সময় জানা যায়, বৃক্ষরোপণে জন্য কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন অফিসে বৃক্ষ চেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক পক্ষের একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ওই চিঠির মাধ্যমে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ এনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। তবে এটাকে সামাজিক কাজ বলে অবিহিত করে বক্তব্য দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার একটি পক্ষ।
এরপর অপর পক্ষ সংগঠনের আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন ও সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্স ‘সাংগঠনিক নীতি ও আদর্শবিরোধী কার্যক্রম’—এর অভিযোগ এনে বহিষ্কারাদেশ জারি করেন।