বালু সরানোর কথা বলে আ’লীগের মিছিলে, কারাগারে ১০ শ্রমিক

কুষ্টিয়ার পিটিআই রোডে সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বাসার সামনে ঝটিকা মিছিল করেন ১৫-১৭ জন। এদের মধ্যে ১০ জনই ছিলেন মাটিকাটা শ্রমিক। তবে এ ঘটনায় ১০ শ্রমিককে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
ওই রোডে বালি সরানোর কথা বলে শ্রমিকদের ডেকে নিয়ে আসেন শহর যুবলীগ নেতা সজীবুর রহমান সজীব।
তিনি বলেন, সারাদিন কষ্ট করে মাটিকাটা লাগবে না, তোমরা এক মিনিট মিছিল করলেই পুরো টাকা পেয়ে যাবে। গ্রামের সহজসরল মানুষগুলো তার ফাঁদে পা দিয়ে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলে যোগ দেন।
রবিবার সকালে পিটিআই রোডে মাহবুবুল আলম হানিফের বাসার সামনে এই মিছিলের চেষ্টা করেন সজীবসহ যুবলীগের কয়েকজন নেতা। পরে পুলিশ ১০ শ্রমিককে আটক করে। আটকদের মধ্যে ৮ জন কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ও দুজন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।
আটককৃতরা হলেন- কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া বাড়াদী এলাকার মৃত আলম সর্দারের ছেলে সালাম সর্দার, মৃত আজবার শেখের ছেলে আলতাফ শেখ, মৃত আফজাল শেখের ছেলে সূর্য শেখ, মৃত আফসার উদ্দিন খানের ছেলে আলম খান, মৃত আইনুদ্দিনের ছেলে মোতালেব, কয়া কালোয়া গ্রামের মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে ফরিদ ব্যাপারী, বাড়াদী বানিয়াপাড়ার মৃত ফকরুদ্দিনের ছেলে সাইদুর রহমান, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের মৃত শাহাদত মন্ডলের ছেলে নজিম উদ্দিন মন্ডল ও বোয়ালদাহ মেছোপাড়ার মৃত হানিফ সর্দারের ছেলে আব্দুল খালেক।
শ্রমিকদের স্বজনরা জানান, রোববার সকালে শহরের ছয় রাস্তার মোড় থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তি বালু সরানোর কথা বলে ১০ জন শ্রমিককে ৬০০ টাকা হাজিরায় কুষ্টিয়া পিটিআই রোডে ডেকে নিয়ে যান। পরে সেখানে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি শ্রমিকদের বলেন সারাদিন কষ্ট করা লাগবে না, এখানে দাঁড়ালেই পুরো টাকা পেয়ে যাবে। সেখানে কয়েকজন একটি ব্যানার নিয়ে শ্রমিকদের পেছনে দাঁড় করিয়ে দেয়। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাকিরা পালিয়ে গেলেও শ্রমিকরা সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাদের আটক করে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন বলেন, শ্রমিকদের ভাড়া করে এনে মিছিলের চেষ্টা করা হয়েছিল। পুলিশের তৎপরতায় তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ১০ জনকে আটক করেছে।
এ ঘটনায় ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
তিনি তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘১লা জুন সকালে কুষ্টিয়া মডেল থানাধীন পিটিআই রোডে আওয়ামী লীগের ডামি এমপি মাহবুবুল আলম হানিফের বাসার সামনে ১৫-১৭ জন মিছিল করে। এর মধ্যে ১০ জন ছিল মাটিকাটা শ্রমিক। এই শ্রমিকদের মাটি কাটার কথা বলে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাদের বলা হয়, সারাদিন কষ্ট করে মাটিকাটা লাগবে না, তোমরা ১ মিনিট মিছিল করলেই পুরো টাকা পেয়ে যাবা। গ্রামের সহজসরল মানুষগুলো ভাবে, সারাদিন কষ্ট না করে যদি ১ মিনিট মিছিল করে টাকা পাওয়া যায়, তাহলে তো ভালোই, কেউ তো আর দেখছে না। তাই তারা ১ মিনিটের মিছিলে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু এরা জানতো না যে, ফেসবুকে ভিডিও ছাড়লে তাদের সহজেই চিহ্নিত করা যাবে। পরবর্তীতে খবর ছড়িয়ে পড়লে তারা এরেস্ট হয়েছে। এবং পুলিশের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে। আ.লীগের লোকেরা এভাবে সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলছে। এদের আইনজীবীর পেছনে খরচ করার সামর্থ্য নাই। এই মানুষগুলোর ১ দিন কাজ না করলে চুলোয় আগুন জ্বলে না, স্ত্রী সন্তানের পেটে খাবার জোটে না। অথচ মানুষগুলো সামান্য লোভে আজ বিপদে! এ বিষয়ে সচেতনতা জরুরি।’