মাইলস্টোন কলেজে যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনা: কেন ঘটলো এই ভয়াবহ ট্রাজেডি?

ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়িতে সোমবারের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা এখনও মানুষের মনকে নাড়া দিচ্ছে। চীনের তৈরি এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানটি দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমান বাহিনীর রানওয়ে থেকে উড্ডয়ন করে। কিন্তু মাত্র ১২ মিনিট পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন কলেজের ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। এতে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে উদ্ধারকাজ চলছে।
দুর্ঘটনার মুহূর্তে কী ঘটেছিল?
তদন্ত কমিটির প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বিমানের শেষ মুহূর্তের গতি ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। পাইলট ‘ইজেক্ট’ করার চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। একজন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, “যান্ত্রিক ত্রুটি মূল কারণ হতে পারে। তবে পাইলটের শারীরিক বা মানসিক অবস্থাও বিবেচনায় আছে। তবে, পাইলটের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন নেই।”
ঢাকাতেই কেন প্রশিক্ষণ ফ্লাইট?
প্রশিক্ষণ রাজধানীর মতো জনবহুল এলাকায় কেন হয়, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন— ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে প্রশিক্ষণ রানওয়ে নেই। স্বাধীনতার পর থেকে বিমান বাহিনীকে আধুনিকায়নের সঠিক উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। চীনের তৈরি এফটি-৭ বিজিআই মডেলের উৎপাদন ২০১৩ সালে বন্ধ হলেও বাংলাদেশে এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে।
জেট ফুয়েল: ট্রাজেডির মূল জটিলতা
দুর্ঘটনার পর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণ ছিল জেট ফুয়েল। এই জ্বালানি সাধারণ চুলার গ্যাসের মতো নয়, বরং এর শিখা ১৫০০ থেকে ২০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তপ্ত হতে পারে মন্তব্য করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) মনিরুজ্জামান। তুলনা করলে— এলপিজি শিখা: ১০০০–১২০০°C, কাঠের আগুন: ৬০০–১০০০°C আর জেট ফুয়েল আগুন: ১৫০০–২০০০°C.
এত ভয়াবহ তাপমাত্রায় দেহ সম্পূর্ণ পুড়ে অঙ্গহানি বা আংশিক গলে যাওয়া স্বাভাবিক বিষয়। মানুষের শরীরের অধিকাংশ অংশ পানি হলেও এত উচ্চ তাপে শরীরের চর্বি ও পেশি দ্রুত পুড়ে যায়, হাড় পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে দেহ শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
এ নিরাপত্তা বিশ্লেষক আরো বলেন, পানি দিয়ে জেট ফুয়েলের আগুন নেভানো সম্ভব নয়, কারণ জেট ফুয়েল পানির চেয়ে হালকা এবং পানির সঙ্গে মেশে না। ফোম (AFFF) ও শুকনো রাসায়নিক পাউডার ব্যবহার করলেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এত তাপমাত্রায় ভবন, লোহা, কংক্রিট পর্যন্ত দুর্বল হয়ে যায়।
মানবিক বিপর্যয় ও বড় প্রশ্ন
দুর্ঘটনার পর মানুষের মনে জাগছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন— কেন পুরনো যুদ্ধবিমান দিয়ে প্রশিক্ষণ চলছে? কেন বিকল্প প্রশিক্ষণ রানওয়ে তৈরি হয়নি? জনবহুল এলাকায় বিমান ওড়ানোর সিদ্ধান্ত কি নিরাপদ?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই দুর্ঘটনা কেবল মর্মান্তিক ঘটনাই নয়, বরং বিমান বাহিনীকে আধুনিকায়নের ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।
দেহ কেন গলে যেতে পারে?
মানুষের শরীরের জৈব টিস্যু ১২০০°C তাপমাত্রার ওপরে পুড়তে পুড়তে অঙ্গ ও হাড় ভেঙে যায়। জেট ফুয়েলের শিখা ২০০০°C পর্যন্ত উত্তপ্ত হতে পারে, তাই পুরো শরীর ছাই বা গলিত অবস্থায় পরিণত হওয়া সম্ভব। অনেক ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ধাতব জিনিস যেমন আংটি বা বেল্টের অংশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
এই কারণে শনাক্তকরণ জটিল হতে পারে এবং ডিএনএ টেস্ট ছাড়া অধিকাংশ পরিচয় নিশ্চিত করা কঠিন হবে।