অনুমতি ছাড়াই চলছে বিয়ের অনুষ্ঠান, সরকারি লোকসান অর্ধকোটি টাকা

রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র রমনা পার্কের ভেতরে অবস্থিত গণপূর্ত অধিদপ্তরের রেস্তোরাঁটি এখন রাজনৈতিক দখলের প্রতীক। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে বৈধ ইজারাদারকে উৎখাত করে রেস্তোরাঁটি দখল করেছেন বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক প্রভাবশালী ব্যক্তি মোল্লা ইউসুফ, যিনি নিজেকে কোতোয়ালি থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী বলে দাবি করেন।
দখল, বাণিজ্য, আর সরকারি লোকসান
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রমনা রেস্তোরাঁ এখন একটি জমজমাট বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সেখানে বিয়ের অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন চলছে, যার জন্য কোনো ধরনের সরকারি অনুমতি নেওয়া হয়নি। পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির পাশাপাশি সরকারি কোষাগারে জমা পড়েনি একটি টাকাও। ফলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
ইজারা প্রক্রিয়ার অস্বচ্ছতা ও দখলের নেপথ্য
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে পাঁচ বছরের ইজারার জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তর দরপত্র আহ্বান করে। ছয়টি দর প্রস্তাবের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকায় ইজারা নিতে চায় হাবিব হোটেল ইন্টারন্যাশনাল। অথচ মাত্র ৩ কোটি ৩ লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়ে ইউরো এশিয়ানো নামে একটি প্রতিষ্ঠান ইজারা পেয়ে যায়, যা সরকারের নির্ধারিত চাহিদার তুলনায় ২৮ শতাংশ কম।
এই ইউরো এশিয়ানোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লুর রহমান, যিনি সালমান এফ রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। পরবর্তীতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জিল্লুর রহমানকে সরিয়ে রেস্তোরাঁর দখল নেন মোল্লা ইউসুফ ও তার অনুসারীরা।
সরকারি উচ্ছেদ প্রক্রিয়া: চিঠি গেছে, অভিযান আসছে
গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন,
“গত বছরের ৫ আগস্টের পর কিছু লোক রেস্তোরাঁটি দখলে নেয়। এরপর থেকে আমরা কোনো ভাড়া পাচ্ছি না। জেলা প্রশাসককে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগির উচ্ছেদ অভিযান হবে।”
প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার জানান, নতুন ইজারা আহ্বানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং সেটি চূড়ান্ত হলে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।
দখলদারের দাবি ও অনৈতিক বাণিজ্য
শনিবার রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখা যায়, সেখানে কর্মরত আছেন অন্তত ৩৫ জন। আশপাশের লোকজন জানান, বিএনপি নেতা মোল্লা ইউসুফ রেস্তোরাঁটি পরিচালনা করছেন এবং পার্কের লেকে থাকা প্যাডেল বোটগুলো থেকেও আয় করছেন। প্রতি ৩০ মিনিটে ভাড়ার পরিমাণ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।
মোল্লা ইউসুফ সংবাদ পরিক্রমাকে বলেন,
“এটির মালিক মূলত জিল্লু ভাই। আমি লিখে নিছি। যে আয় হয়, তা দলের লোকজনকেও দিই। সরকারিভাবে টেন্ডার হলে আমিই নেব ইজারা।”
তবে বর্তমানে নিখোঁজ থাকায়, জিল্লুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। ফলে মোল্লা ইউসুফের দাবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি।