শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

নাজমুন নাহার :

প্রকাশিত: ২১:০৭, ১০ জুলাই ২০২৫

প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে পাশে পাচ্ছে জাতিসংঘ ও বিমসটেক

প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে পাশে পাচ্ছে জাতিসংঘ ও বিমসটেক
সংগৃহীত

বাংলাদেশে বাড়তে থাকা প্লাস্টিক দূষণ রোধে একসঙ্গে কাজ করবে জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউএনওপিএস (UNOPS) এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জোট বিমসটেক (BIMSTEC)। পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে এই দুই সংস্থা ঢাকায় আয়োজন করেছে একটি উচ্চপর্যায়ের সেমিনার, যার মাধ্যমে প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করা হবে।

সেমিনারটি আয়োজন করা হয় ঢাকার পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে। জাতিসংঘ ঘোষিত ২০২৫ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আয়োজিত এই সভায় অংশ নেন সরকারি কর্মকর্তারা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, তরুণ সমাজকর্মী ও আন্তর্জাতিক অংশীদাররা। সবাই মিলে প্লাস্টিক দূষণ রোধে করণীয় এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউএনওপিএস-এর বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ম্যানেজার সুধীর মুরালিধরণ। তিনি বলেন, “প্লাস্টিক দূষণ শুধুমাত্র পরিবেশের সমস্যা নয়—এটি একটি অবকাঠামোগত এবং আচরণগত চ্যালেঞ্জ, যা সাহসী ও সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হবে। বাংলাদেশের এমন কার্যকর সমাধান এবং আঞ্চলিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বড় লক্ষ্যগুলোকে বাস্তব পরিবর্তনে রূপান্তর করতে ইউএনওপিএস সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান। তিনি বলেন, “শিল্প উন্নয়নের প্রতিটি স্তরে আমাদের টেকসই ভাবনাকে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। পরিবেশগত দায়িত্ব এবং শিল্প খাতের রূপান্তরকে একসূত্রে আনতে এই সেমিনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

বিমসটেক-এর মহাসচিব ইন্দ্র মণি পাণ্ডে বলেন, “প্লাস্টিক দূষণ একটি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সমস্যা, যা মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বঙ্গোপসাগর অঞ্চলকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত করতে BIMSTEC আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে প্রস্তুত।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান এনডিসি। তিনি বলেন, “পরিবেশ অধিদপ্তর আমাদের প্লাস্টিক কর্মপরিকল্পনাকে বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্যে আমরা নতুন উদ্ভাবন, জবাবদিহিতা এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন খাতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চাই।

বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮৭,০০০ টনেরও বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে, যা পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি তৈরি করছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ২০২০–২০৩০ সময়কালের জাতীয় কর্মপরিকল্পনার লক্ষ্য হলো—২০২৬ সালের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্য ৩০ শতাংশ কমানো, ৫০ শতাংশ পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ৯০ শতাংশ বিলুপ্ত করা।

সেমিনারে আলোচনায় উঠে আসে উদ্ভাবনী অর্থায়ন, জনসচেতনতা বৃদ্ধির কৌশল, জাতীয় পর্যায়ের নীতিমালা বাস্তবায়ন, পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে নতুন উদ্ভাবন এবং গণমাধ্যমের ভূমিকার বিষয়গুলো।

এই আয়োজন থেকে একটি যৌথ ঘোষণাপত্র (Joint Communiqué) প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে সমুদ্র দূষণ রোধে আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা আরও জোরদার করা যায়। একই সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব, সবুজ অর্থায়ন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে একটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য অর্থনীতি গড়ার প্রত্যাশাও করা হচ্ছে।

এভাবেই প্লাস্টিক দূষণ রোধে বাংলাদেশ একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে—যেখানে দেশীয় উদ্যোগ আর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মিলে তৈরি করছে পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা।