বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশিত: ১৭:১২, ২৬ জুন ২০২৫

নিবন্ধনের হিড়িক, কিন্তু বাস্তবতা ‘কাগুজে দল’

নিবন্ধনের হিড়িক, কিন্তু বাস্তবতা ‘কাগুজে দল’
সংগৃহীত

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের আবেদন জমা দিয়েছে ১৪৭টি নতুন রাজনৈতিক দল। তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এদের অনেকেরই বাস্তব কোনো কার্যক্রম নেই। কোথাও নেই দলীয় কার্যালয়ের অস্তিত্ব, কোথাও আবার দলের নামই শোনেননি স্থানীয়রা।

ঢাকার পুরানা পল্টনের ৫৪ নম্বর বি কে টাওয়ারের ঠিকানায় বাংলাদেশ তিসারী ইনসাফ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দেখানো হয়েছে। সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, আজাদ প্রোডাক্টসের গলিতে থাকা ওই ভবনে কোনো দলীয় সাইনবোর্ড নেই। স্থানীয় বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, "এই দলের নাম আপনার মুখ থেকেই প্রথম শুনলাম। কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি।" দলের চেয়ারম্যান মো. মিনহাজ প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

এমনই আরেক দল জাতীয় ন্যায় বিচার পার্টি, যারা নয়াপল্টনের ইসলাম টাওয়ারের সপ্তম তলায় তাদের অফিস দেখিয়েছে। কিন্তু সেখানে একাধিক ট্রাভেল এজেন্সি থাকলেও কোনো রাজনৈতিক দলের চিহ্ন নেই।

‘২২ ভোট’ পেলেও নিবন্ধনের আশা ২০১৮ সালের নির্বাচনে মাত্র ২২ ভোট পাওয়া বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস)-ও এবার নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। দলটির ধানমন্ডির একটি চার রুমের অফিসই তাদের একমাত্র উপস্থিতি। প্রতিষ্ঠাতা মো. হাসান দাবি করেন, “আমরা সবচেয়ে পুরোনো দলগুলোর একটি। এবার নিবন্ধন পাবো বলেই আশা করছি।”ঠিকানা আছে, কাঠামো নেই।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনেক দল দোকান বা ব্যক্তিগত বাসার চেম্বারকে দলীয় কার্যালয় হিসেবে দেখিয়েছে। আবার কারও কারও দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে কোনো দলের অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। অধিকাংশ দলের নেই জেলা বা উপজেলা কমিটি, নেই কোনো জনসম্পৃক্ত কার্যক্রম।

‘কে চেনে এসব দলকে? ’রাজধানীর রিকশাচালক থেকে শুরু করে গুলশান, মিরপুর, ধানমন্ডির সাধারণ মানুষ পর্যন্ত এসব দলের নাম কখনও শোনেননি। মোবাইল ব্যবসায়ী ফয়সাল সরকার বলেন, “তিসারী ইনসাফ বা বেকার সমাজ—এই নামগুলো জীবনে শুনিনি।”

রিকশাচালক মানিক মিয়ার বক্তব্য, “যার নামই জানি না, তার কাছ থেকে কীই বা প্রত্যাশা? ”ইসির সামনে বাস্তব দল শনাক্তের চ্যালেঞ্জ

ইসি সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ১০ মার্চ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে ১৪৭টি দল। তবে প্রাথমিক যাচাইয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ দলের কোনো সংগঠন কাঠামো, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বা দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই। কেউ কেউ কেবল একটি দলীয় প্যাড দিয়েই আবেদন করে রেখেছে গাইবান্ধার বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি আবার সঠিকভাবে আবেদনই করতে পারেনি, পরে সময় চেয়েছে।ৈ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন এসব ‘কাগুজে দল’ ছেঁকে ফেলে প্রকৃত, সক্রিয় ও গণভিত্তিসম্পন্ন রাজনৈতিক দলকে তালিকাভুক্ত করা। কারণ ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক পরিবেশে জবাবদিহিতার ভিত্তিতে টেকসই রাজনীতির জন্য দরকার কার্যকর রাজনৈতিক শক্তি, কাগুজে দল নয়।