শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নাজমুন নাহার :

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ৬ জুন ২০২৫

দামে হার, বাজারে ভার—বিপাকে খামারি

দামে হার, বাজারে ভার—বিপাকে খামারি
সংগৃহীত

কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানের পশুর হাটগুলো জমজমাট হওয়ার কথা। কিন্তু গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও দেখা যাচ্ছে এক ভিন্ন চিত্র। হাটে গরুর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হলেও চোখে পড়ছে না তেমন ক্রেতা। অনেক হাটে আবার ক্রেতা থাকলেও কোরবানির পশুর সংকট স্পষ্ট।

এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু নিয়ে আসা প্রান্তিক খামারিরা।

বিশেষত ঢাকার আশেপাশে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক খামারগুলোর 'লোভনীয়' অফারের কারণে গেরস্থ গোয়ালের খামারিরা বিক্রির দিক থেকে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন, ফার্মের গরুর প্যাকেজ এবং দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় ক্রেতারা হাটে এসে সাধারণ খামারির পশুর প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অনেক সময় দরদাম করতেও অনীহা প্রকাশ করেন।

ঢাকার শ্মশান ঘাট, পোস্তগোলা, শনির আখড়া ও কমলাপুর এলাকার হাট ঘুরে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, কুষ্টিয়া, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু নিয়ে এসেছেন সাধারণ বিক্রেতারা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে তারা হতাশ। অনেকেই বলছেন, এবার হয়তো খরচটাই উঠে আসবে না।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে আসা খামারি আবদুর মোজাম্মেল কমলাপুর হাটে ৮টি গরু নিয়ে এসেছিলেন। বিকেল পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে মাত্র তিনটি। এর মধ্যে দুটি ৪ থেকে সাড়ে ৪ মণের গরু বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় এবং আরেকটি গরু ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায়।

মোজাম্মেল বলেন, “প্রত্যাশার চেয়ে প্রতিটি গরু ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে।” তার মতে, খাদ্য, ফিড এবং শ্রমিক খরচ বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ; অথচ বাজারদর কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ।

এদিকে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবারে দেশে কোরবানির পশুর জোগান চাহিদার তুলনায় প্রায় ২০ লাখ বেশি। হাটে তোলা হচ্ছে মোট ১ কোটি ২৪ লাখ পশু, যার মধ্যে গরু ও মহিষ ৫৬ লাখ, আর ছাগল, ভেড়া ও অন্যান্য মিলিয়ে ৬৮ লাখ। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ।

চট্টগ্রাম ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মালিক মোহাম্মদ ওমর জানান, “অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে গরুর দাম পড়ে যাচ্ছে। আবার বড় কোরবানিদাতা প্রবাসে থাকায় এবার চাহিদা কিছুটা কম।”

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু সুফিয়ান অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন, “চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হলেও আমরা হাট পর্যবেক্ষণে রেখেছি। মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করছে। পশুর কোনো ঘাটতি হবে না।”

প্রান্তিক খামারিরা অভিযোগ করছেন, বড় ফার্মগুলো ঈদের মৌসুমকে ব্যবসায়িক সুযোগ হিসেবে নিয়ে আগেভাগেই বাজার বুঝে গরু রিজার্ভ রাখে। এতে হাটে নতুন করে আসা বিক্রেতারা মূল্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েন।

ঢাকার বাইরের একজন বিক্রেতা বলেন, “ক্রেতারা আগে থেকে অনলাইন বা ফার্মে গরু দেখে আসে। হাটে এসে কেবল তুলনা করে দেখে চলে যায়।”

তবে আশার কথা, মহাসড়কে চাঁদাবাজি কিছুটা কমেছে। এক গরু ব্যবসায়ী জানান, “আগে চেকপোস্টে প্রতি গরুর জন্য ৪–৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হতো। এবার তা অনেকটাই কমেছে, যদিও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।”

সব মিলিয়ে, কোরবানির হাটে এবার গরুর আধিক্য থাকলেও দাম ও চাহিদার ভারসাম্যহীনতায় বিপাকে পড়েছেন খামারিরা।

বিশেষ করে যারা বছরের পর বছর এই আয়কে জীবিকার প্রধান উৎস হিসেবে দেখেন, তাদের জন্য এবারের কোরবানির ঈদ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্পর্কিত বিষয়: