শনিবার ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ক্রেতাদের প্রতারক বানিয়ে মিথ্যা মামলা

ওসি-এসআইয়ের ৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অডিও ফাঁস

ওসি-এসআইয়ের ৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অডিও ফাঁস
সংগৃহীত

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের নকল পুতুল ও মুদ্রা দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে পাঁচজনকে আটকের পর মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনার ৩ দিন পর এক পুলিশ কর্মকর্তার অডিও ফাঁস হয়েছে। সেখানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। 

অডিও ফাঁসের পর জানা গেছে, রাণীশংকৈল থানার ওসি আরশেদুল হক ও এসআই শহিদুল ইসলামসহ কজন কর্মকর্তার যোগসাজশে আটক ব্যক্তিদের কাছে থাকা ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করাসহ আবার সেই ক্রেতাদের প্রতারক বানিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশের তথ্য সরবরাহকারী আকাশ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে রাণীশংকৈল থানার এসআই শহিদুল ইসলামের কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওতে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। 

পুলিশের ফাঁস হওয়া অডিও বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত থেকেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অডিও ফাঁসের পর থেকে ব্যাপক সমালোচনার চলছে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের এমন কাণ্ডে হতাশ সবাই। 

অডিওকলে ওই ঘটনার তথ্য সরবরাহকারী আকাশ ও রাণীশংকৈল থানার এসআই শহিদুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়। 

আকাশ-আমি আগে থেকেই জানতাম যাদের আটক করে জেলে দিয়েছেন তারা ক্রেতা হিসেবে না বুঝে নকল সোনা কিনতে আসছিল। তাদের কোনো দোষ নেই। তাদের কাছে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিল। আমার সঙ্গে আপনাদের (পুলিশের সঙ্গে) কন্ট্রাক হয় তাদের ধরিয়ে দিলে লাখে ত্রিশ হাজার টাকা দেবেন। কেন দিলেন না। 

পুলিশের এসআই শহিদুল ইসলাম উত্তরে বলেন, স্যার (ওসি) সাহেব আমাকে নম্বর দিয়ে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন আপনি না আসলে লোক পাঠাবেন তাও পাঠাননি। কাউকে পাঠান। 

আকাশ-আপনারা কনফ্রাম না করলে বা না ডাকলে কীভাবে পাঠাব। তাদের কাছে ৬ লাখ ৮০। শহিদুল- না তাদের কাছে এত টাকা ছিল না। পাওয়া গেছে ৩ লাখ। ওই টাকাও তাদের ফেরত দেওয়া হয়েছে। তখন খুশি হয়ে স্যারকে ৫০ হাজার টাকা দেয় তারা। 

আকাশ-তারা কেউ টাকা ফেরত পায়নি। তারা সবাই তো জেলে। আর কাকে টাকা ফেরত দিলেন তা আমি দেখব কেন সোর্সের সঙ্গে যা কন্ট্রাক হয়েছে তা দিয়ে দেবেন। আর তারা তো নিরপরাধ মানুষ ছিল। তারা কিনতে আসছিল। 

শহিদুল, তারা সত্যি নির্দোষ ছিল। বড় স্যারও বলেছিল তাদের মামলা দেওয়া হলো। তবে ওসি স্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কী করার। আর তাদের যে টাকা ফেরত দিয়েছে ওখানে সাংবাদিকরাও ছিল। আমিও আগে থেকে জানতাম এই ব্যবসা চলে সেখানে। যাক আপনি লোক পাঠান। এর বাইরেও অর্থ লেনদেনসহ নানা বিষয়ে কথা বলতে শোনা যায় অডিওতে। 

তবে অডিও পোস্টের কমেন্টে নেটিজনরা লিখেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলেও তার রেখে যাওয়া দোসররা এখনও বহাল তবিতে রয়েছে বিভিন্ন থানায়। তারা ৫ আগস্টের পর থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষদের জিম্মি করছে। ১৩ মিনিট ৪২ সেকেণ্ডের একটি ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডের মাধ্যমে স্পষ্ট, পুলিশের অভিযানে আটক হয়েছিল তারা নির্দোষ। তাদের ক্রেতা থেকে প্রতারক সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর এর পেছনে রাণীশংকৈল থানার ওসিসহ পুলিশের কিছু কর্মকর্তা জড়িত। অবিলম্বে ওই থানার ওসি আরশেদুল হকসহ জড়িতদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতনদের প্রতি অনুরোধ জানান তারা। 

থানার এসআই শহিদুল ইসলাম কল রেকর্ডের কথা স্বীকার করে বলেন, ওসি সাহেবের নির্দেশেই আকাশের সঙ্গে কথা হয়। এখানে আমার কোনো দোষ নেই। 

এ বিষয়ে রাণীশংকৈল থানার এসপি স্নেহাশীষ কুমার দাস বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। তদন্ত করে পুলিশ সুপারের নির্দেশে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার বিষয়টি নজরে এসেছে। তদন্ত করা হচ্ছে। এর সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

উল্লেখ্য, এর আগে ওই উপজেলায় নকল সোনার পুতুল ও রুপার মুদ্রা দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সোনালি রঙের মূর্তি, পুরনো নকশার রুপার মুদ্রা ও নগদ টাকাসহ আসামিদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন রাণীশংকৈল থানার ওসি আরশেদুল হক। 

সম্পর্কিত বিষয়: