বুধবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১ আশ্বিন ১৪৩২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গাজায় ইসরায়েলি হামলার তাণ্ডব, শহর ছাড়ছে হাজারো ফিলিস্তিনি

গাজায় ইসরায়েলি হামলার তাণ্ডব, শহর ছাড়ছে হাজারো ফিলিস্তিনি
ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলি সেনাদের ভয়াবহ হামলায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় শহর গাজা সিটি ছেড়ে পালাচ্ছেন হাজারো মানুষ। জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন চলমান এই যুদ্ধকে সরাসরি ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলবিরোধী সমালোচনা আরও তীব্র হচ্ছে।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। বোমা ও গুলিবর্ষণের আতঙ্কে গাজা সিটি ছেড়ে দক্ষিণমুখী আল-রাশিদ সড়কে ছুটছেন হাজারো ফিলিস্তিনি। কেউ ভ্যান, কেউ গাধার গাড়ি, আবার কেউ সামান্য মালপত্র হাতে নিয়েই প্রাণ বাঁচাতে ছুটছেন। চারপাশে ধ্বংসস্তূপ আর কালো ধোঁয়ার মাঝেই তারা আশ্রয়ের খোঁজ করছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব এ হামলাকে আখ্যা দিয়েছেন “ভয়ঙ্কর” হিসেবে।

প্রথমদিকে অনেকেই দখল পরিকল্পনার মুখেও শহর না ছাড়ার শপথ নিয়েছিলেন। কিন্তু বহুতল ভবন ও অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়া তীব্র বোমাবর্ষণের কারণে যাদের সামর্থ্য আছে তারা দক্ষিণে পালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সেখানেও নিরাপদ আশ্রয়ের নিশ্চয়তা নেই।

মঙ্গলবার একদিনেই ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৯১ জন নিহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, পালানোর পথে উপকূলীয় সড়কে থাকা গাড়িতেও হামলা চালানো হয়। শুধু সেদিনই অন্তত ১৭টি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়। পূর্ব গাজার তুফফাহ এলাকায় আইবাকি মসজিদকেও লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়।

এছাড়া বিস্ফোরকবোঝাই রোবট ব্যবহার করে উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। মানবাধিকার সংগঠন ইউরোমেড মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ১৫টি রোবট মোতায়েন করা হয়েছে, প্রতিটি দিয়ে প্রায় ২০টি বাড়ি ধ্বংস করা সম্ভব।

যুদ্ধের প্রথম ধাপ শেষে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি গাজা সিটিতে ফিরেছিলেন। তবে এখন কতজন রয়ে গেছেন তা নিয়ে তথ্য ভিন্ন।

ইসরায়েলি সেনাদের দাবি, প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ শহর ছেড়েছেন। গাজার সরকারি গণমাধ্যম অফিস বলছে, সমান সংখ্যক মানুষ শহরের কেন্দ্র ও পশ্চিমাংশে আশ্রয় নিয়েছেন, আর অন্তত ১ লাখ ৯০ হাজার সম্পূর্ণভাবে শহর ছেড়েছেন।

এদিকে দক্ষিণে যাওয়া মানুষের জন্যও পরিস্থিতি নিরাপদ নয়। রাফাহ ও খান ইউনিস থেকে বিতাড়িত জনস্রোতে ভরা আল-মাওয়াসি শরণার্থী ক্যাম্পেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সেখানে ভয়াবহ অবস্থা দেখে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ আবার গাজা সিটিতেই ফিরে গেছেন।

মঙ্গলবার ইসরায়েলি সেনারা আকাশপথ থেকে গাজা সিটিতে অগ্রসরমান বিপুলসংখ্যক ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যানবাহনের ফুটেজ প্রকাশ করেছে। সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, পুরো শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে তাদের “কয়েক মাস” সময় লাগবে।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র এফি ডেফ্রিন বলেন, “যত সময়ই লাগুক, আমরা গাজায় অভিযান চালিয়ে যাব।” মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোর থেকে সারা গাজায় অন্তত ১০৬ জন নিহত হয়েছেন।