শুক্রবার ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৪০, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জুলাইয়ের চেয়ে আগস্টে গণপিটুনিতে হত্যা বেড়েছে

জুলাইয়ের চেয়ে আগস্টে গণপিটুনিতে হত্যা বেড়েছে
সংগৃহীত

দেশে গণপিটুনিতে হত্যার সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। আগস্টে দেশে অন্তত ৩৮টি গণপিটুনির ঘটনায় ২৪ জন নিহত এবং ৪৩ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। জুলাই মাসে এমন ৫১টি ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ১৬ জন।

গতকাল রবিবার মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং সংগঠনটির নিজস্ব অনুসন্ধানের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
এমএসএফ বলছে, গণপিটুনিতে নিহতদের মধ্যে চুরির অভিযোগে ১০ জন, সন্দেহজনক চুরির অভিযোগে চারজন, ডাকাতির অভিযোগে তিনজন, পূর্ব শত্রুতার জেরে নারীসহ দুজন, মাদক মামলায় অভিযুক্ত একজন, ছিনতাইয়ের অভিযোগে দুজন এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে একজনকে হত্যা করা হয়।

এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান জানান, আগস্টে যত ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে দেশে। ভয়ে এখন কেউ মুখ খুলতে চায় না।


গণপিটুনির সংখ্যা বেড়ে যাওয়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির প্রমাণ।

রাজনৈতিক সহিংসতা : রাজনৈতিক সহিংসতায় আগস্ট মাসে ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। তাঁদের মধ্যে দুজন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। নিহতরা বিএনপির কর্মী ও সমর্থক।

আহতদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ এবং সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

সাংবাদিক নির্যাতন : পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আগস্ট মাসে দেশের বিভিন্ন জেলায় ৩৩টি ঘটনায় ৯৬ জন সাংবাদিক হামলা, আইনি হয়রানি, হুমকি, হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আগস্টে আক্রান্ত সাংবাদিকদের সংখ্যা জুলাই মাসের তুলনায় তিন গুণ।

আগস্ট মাসে একজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে।

আইনি হয়রানির শিকার ৩৬ জন সাংবাদিকের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৩ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় হামলার শিকার হয়েছেন। লাঞ্ছনা ও হুমকির শিকার হয়েছেন ১৬ জন সাংবাদিক এবং ২০ জন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি ও মানহানির মামলা হয়েছে। জুলাইয়ে সাংবাদিকদের ওপর ১৯টি নির্যাতনের ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩০ জন।
কারা হেফাজতে মৃত্যু : এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে কারা হেফাজতে মোট ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জুলাইয়ে এর সংখ্যা ছিল ১০।

সংখ্যালঘু নির্যাতন : আগস্টে বিভিন্ন পর্যায়ে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ১০টি ঘটনা ঘটেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা দুটি, ধর্ষণের ঘটনা একটি, জমি দখলের ঘটনা একটি, একটি গুজব এবং তিনটি ঘটনায় কটূক্তির অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা : আগস্ট মাসে ৩৪৯টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যা জুলাইয়ের তুলনায় তিনটি কম। এমএসএফ জানিয়েছে, আগস্টে ৪৭টি ধর্ষণ, ১৯টি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে চারটি। তাঁদের মধ্যে ৯ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার ৪৭ জনের মধ্যে ১১টি শিশু, ১৭ জন কিশোরী রয়েছে। অন্যদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ছয়জন কিশোরী এবং ৯ জন নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দুই শিশু ও এক কিশোরীকে। এ ছাড়া ২৪টি ধর্ষণচেষ্টা, ২১টি যৌন হয়রানি এবং ৯৪টি শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।