আজিজ আহমেদ কে নিয়ে মানবজমিনের মিথ্যাচারের খন্ডন
হলুদ সাংবাদিকতা বা ইয়েলো জার্নালিজম কি তা ৫ ই জুন মানবজমিনের প্রতিবেদক শরিফ রুবেলের "জেনারেল আজিজের তেলেশমাতি" শীর্ষক কথিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন পড়লে খুব ভালো করে বুঝা যায়। সেনসেশনাল শিরোনাম, অতি দূর্বল গবেষণা, স্ক্যান্ডাল নির্ভর তথ্য এবং তাতে কিছু জ্ঞানপাপীর গুরুত্বারোপ। তথা মেকি আবেগী হওয়ার চেষ্টা। সর্বোপরি বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রিপোর্টিংয়ের সকল কিছুই এতে মিশ্রিত আছে।
বিডিআর বিদ্রোহ পরবর্তীতে বাংলাদেশ কঠিন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল। উদ্ভুদ্ধ সেই পরিস্থিতি থেকে সেনাবাহিনী ও বিজিবি কে একটি সুশৃংখল বাহিনীতে রূপান্তর করেছিলেন আজিজ আহমেদ। নিজ মনণ ও মেধা দিয়ে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হওয়ার পরিস্থিতি থেকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি। যিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে দুই দুইটি ডিসিপ্লিনারি বাহিনীর সর্বোচ্চ পদ মোট ৭ বছর অলংকৃত করেছেন, একধারে ৪ বছর ছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ডিজি ও পরবর্তীতে ৩ বছর ছিলেন সেনাপ্রধান। অবসরে যাওয়ার তিন বছর পর কেন হঠাৎ দেশি-বিদেশি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হলেন এ নিয়ে দেশের জনসাধারণ চিন্তিত, এমনকি বিশ্বের বৃহৎ পরাশক্তির নিষেধাজ্ঞা! সব মিলিয়ে ভিন্ন কিছু নয়তো? জনমনে আজ সেই প্রশ্ন!
ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি জাতীয় পত্রিকা সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অবঃ) আজিজ আহমেদ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিশাল এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যা অসত্য তথ্য দিয়ে গরুর রচনার ন্যায় তৈরী, বিভ্রান্তমূলক এবং উদ্দ্যেশ্য প্রণোদিত।
সংবাদটির প্রতিবাদ জানিয়েছে এপেক্স ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ও নরসিংদী হেরিটেজ রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক মানবজমিন পত্রিকা সত্যতা জানতে সরজমিনে অনুসন্ধান করে জানা যায়, পত্রিকার সংবাদটি সম্পূর্ণ অসৎ ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। যার তথ্য প্রমাণ সহ এখানে তুলে ধরা হলো -
• বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক সেনাপ্রধানগন অবসরের পর তাদের এলপিআর এর এক বছর ঢাকা সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর যেই বাড়িতে থাকেন তার নাম “পথিকৃৎ” বাসা নং-৩। যা ঢাকা সেনানিবাসে আদমজী কলেজের ঠিক উল্টো দিকে অবস্থিত। বর্তমানে, বর্তমান সেনাপ্রধান এর আগামী ২৪ জুন ২০২৪ হতে শুরু হতে যাওয়া এলপিআর এর সময়ে বসবাসের জন্য তৈরী করা হয়েছে।
• পত্রিকাটি তাদের প্রতিবেদনে দাবী করেছে উক্ত বাড়িতি জেনারেল আজিজের বাড়ি। এই তথ্যটি ভুল এবং অসত্য যা সমাজে একটি মিথ্যা তথ্যকে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা ছাড়া অন্য কিছু নয়।
• ঢাকা সেনানিবাসের গল্ফ ক্লাবের উল্টো দিকে নিকুন্জ্ঞ -১, ৬ নং সড়কে বাড়ী নং RCF9+F5P “আজিজ রেসিডেন্স” নামের একটি বিশাল আলিশান বাড়ির মালিক জেনারেল আজিজ। তবে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ওই নামের কোনো বাড়ির অস্তিত্ব নেই। বিষয়টি জেনারেল আজিজের চরিত্র হরনের উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কিছুই নয়।
• মোহাম্মদপুর রামচন্দ্র মৌজায় ৬ কোটি টাকার মূল্যমানের ২টি প্লট রয়েছে যার, আর এস দাগ ৫৮২। তবে অনুসন্ধান বলছে ভিন্ন কথা, সেখানে ২কাঠা প্লট ছিলো তাঁর নামে। যা ২০১৮ সালে বিক্রি করেন তিনি। বর্তমানে সেখানে তাঁর কোনো প্লটই নেই।
• আশুলিয়ায় ২১ বিঘা জমি এবং মনোসন্তোষপুর মৌজায় ৫০ বিঘা জমির পাওয়ার অব এটর্নী নাকি আজিজ আহমেদ। অনুসন্ধানে এর কোনো সত্যতাই মিলেনি। তবে, আশুলিয়ায় ৪৯ .৫০ শতাংশ এবং ২৯.০০ শতাংশ জমির বায়না সূত্র মালিক তিনি বলে জানা গেছে।
• শ্যামলাদি কলাতিয়া জমজম হাউজিং এ জেনারেল আজিজের দুই দাগে ৮০ শতাংশ এবং ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে, যা মিথ্যা। খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি অবসরে যাওয়ার পর ২০২২ সালে সেখানে ৩২ শতাংশ ডোবা জমি এবং ২০২৪ সালে সেখানে ৩০ শতাংশ ডোবা জমি ক্রয় করেন।
• মিরপুর সিরামিক সংলগ্ন যেই ১০ তলা বাড়ীর কথা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেই বাড়ী নির্মানে আজিজ আহমেদ ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন। ইতিমধ্যে সেই ভবনের ৪ টি ফ্লোর বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট বিক্রয় করেছেন।
• পত্রিকাটি দাবি করেছিল, নরসিংদীর মাধবদী রাইনাদী দিঘীর পাড় এ অবস্থিত “হ্যারিটেজ রিসোর্ট” রিসোর্টে আজিজ আহমেদ এর শেয়ার রয়েছে। কিন্তু বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবী রিসোর্ট কতৃপক্ষের। এ নিয়ে তারা প্রতিবাদ লিপিও প্রদান করেছে।
মিথ্যাচারের শিকার জোসেফ ও হারিছ-
“হারিসের হাউজিং দখল” শিরোনামে মানব জমিন মনগড়া এবং বিভ্রান্তকর তথ্য দিয়ে লিখেছেন যে বাড্ডার সাতারকুল এলাকায় ২৩৫ বিঘা জমি নিয়ে সাবেক এমপি রহমতুল্লাহর বড় ছেলে “হেদায়েতুল্লাহ রন” এর সাথে হারিস অন্যের জমি দখল করে হাউজিং প্রজেক্ট করছে। সেখানে আজিজ আহমেদ, শাজাহান এবং হেদায়েতুল্লাহ রনর একটি ছবির সূত্র উল্লেখ করে এর কাল্পনিক সংযোগ তৈরীর চেস্টা করে পত্রিকাটি।
সাবেক সংসদ সদস্য জনার রহমতুল্লাহর বড় ছেলে এপেক্স প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিঃ এর পরিচালক জনাব হেদায়েতুল্লাহ মানব জমিনের ০৫ জুনের প্রতিবেদনের বিরূদ্ধে তার স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলিপি গত ১০ জুন, ২০২৪ তারিখ মানব জমিনের ২ নং পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়।
ঐ প্রতিবাদলিপি সূত্রে জানা যায়, শাজাহান এবং হেদায়েতুল্লাহ রন রমজান মাসে জেনারেল আজিজ সাহেবের বাসায় পূর্ব পরিচিতির সুবাদে স্বস্ত্রীক একদিন ইফতারে যায়। ঐ দিন নেওয়া একটি ছবি কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হতে সংগ্রহ করে জেনারেল আজিজ আহমেদকে জড়ানোর কাল্পনিক এবং চরিত্র হননের উদ্দ্যেশ্যে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। ঐ হাইজিং প্রজেক্ট এর সাথে জেনারেল আজিজের সামান্যতম সম্পৃক্ততা নাই বলে হেদায়েতুল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত প্রতিবাদলীপিতে বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ঐ প্রতিবাদলিপিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, বাড্ডার সাতারকুলে মগারদিয়া এলাকায় গত ৩০ বছর যাবৎ তাদের পৈত্রিক ৩৬০ বিঘা জমি রয়েছে।
আজিজ আহমেদ ও হারিসের নামে ঢাকার হাজারীবাগে ১১ টি প্লট রয়েছে বলে দাবিও সম্পূর্ন মিথ্যা এবং অসৎ উদ্দ্যেশ্য প্রনোদিত।
জোসেফ এবং হারিস এর নামে হেমায়েতপুর আলিপুর ব্রিজের পাশে মাকান রিভারভিউ হাউজিং এ ২১ টি প্লট আছে এবং জোসেফের নামে সিলিকন সিটি তে ২০০ কাঠা জমি আছে। অনুসন্ধানসূত্রে জানা যায় এই সকল তথ্যও সম্পূর্ন মিথ্যা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা বা কোথাও হারিছ - জোসেফ এর নামে কোনো প্লট নাই।
২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে দেশের ক্রন্তিকালে বিজিবি মহাপরিচালক হিসাবে দেশের প্রতি জেনারেল (অব.) আজিজের অবদান, সেনাপ্রধান হিসাবে করোনাকালীন সেনাবাহিনী দ্বারা দেশের জনগনকে সেবা দেওয়া সহ শত অর্জন থাকা সত্ত্বেও দেশপ্রেমিক সাবেক এই সেনাপ্রধানকে মানসিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য দেশি-বিদেশি মিডিয়া, বৃহৎ পরাশক্তি ও দেশীয় কিছু সুশীল সমাজের ব্যক্তি উঠে পড়ে লেগেছে, এটা সহজেই অনুমেয়। এ ধরনের মন গড়া মিথ্যা প্রতিবেদন দেশের মানুষ মোটেও আশা করেনা।
লেখক-
সম্পাদক, দৈনিক সময় সংবাদ