বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

হাসান শান্তনু

প্রকাশিত: ২২:১৩, ২৪ জানুয়ারি ২০২৪

ইসলাম, নপুংসক, রূপান্তরিত নারী-পুরুষ, শরীফার গল্প

ইসলাম, নপুংসক, রূপান্তরিত নারী-পুরুষ, শরীফার গল্প
হাসান শান্তনু

শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রতি সহানুভূতি জন্মাতে সপ্তম শ্রেণির বইয়ের এক অধ্যায়ে নপুংসক (হিজড়া) জনগোষ্ঠী সম্পর্কে পাঠ যোগ হয়। ওই লেখায়, 'শরীফার গল্পে' তৃতীয় লিঙ্গ (থার্ড জেন্ডার) সম্পর্কে বোঝাতে কোথাও 'ট্রান্সজেন্ডার' (রূপান্তরিত নারী-পুরুষ) শব্দটা আসেনি। ধর্মান্ধদের দাবি, 'ট্রান্সজেন্ডারের' মধ্য দিয়ে পাঠ্যবইয়ে সমকামিতা পড়ানো হচ্ছে। সমকামিতা, মাদক মৌলবাদীদের কাছে সবসময় গরম ইস্যু হলেও দুটির সঙ্গেই মৌলভি শ্রেণির সম্পৃক্ততা নিয়ে তাদের প্রতিবাদ নেই। গবেষণা বলছে, মাদ্রাসার পুরুষ শিক্ষকদের মাধ্যমে বালক ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ঘটে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারতের অনেক মাদ্রাসা 'বালক বলাৎকারের কেন্দ্র' হিসেবে নিন্দা কুড়িয়েছে। ধর্মশিক্ষার এসব প্রতিষ্ঠানে নাবালক বালককে ধর্ষণের বিরুদ্ধে, ধর্ষণে অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে মওলানা সমাজ আজ পর্যন্ত কোনো সভা, সমাবেশ করেনি।

আফগানিস্তানের তালেবান, নাইজেরিয়ার বোকো হারাম, মধ্যপ্রাচ্যের আল-কায়েদা, আইএস জঙ্গিগোষ্ঠীর টাকা কামানোর অন্যতম উৎস মাদকব্যবসা। পাশ্চাত্যের যেসব দেশে সমকামিতা, গাঁজা, মদ বৈধ, সেসব দেশেও মুসলমানপ্রধান দেশের মতো এতো বালক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে না। ধর্মীয় গোষ্ঠী সেখানে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত নয়। পাঠ্যবইয়ে সমকামিতা পড়ানোর কথিত অভিযোগ সামনে এনেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত জঙ্গিমনস্ক খণ্ডকালীন 'মাস্টর' আসিফ মাহতাব। উগ্রচিন্তার এ যুবক 'তৃতীয় লিঙ্গের' বিষয়টিকে সমকামিতার সঙ্গে জড়িয়ে ইসলাম ধর্মের প্রসঙ্গ টানছেন। তাকে সমর্থন দেয়া বিভ্রান্ত গোষ্ঠীও ধর্মের কথা বলছে। ধর্মকে টেনে আনায় বিষয়টি নিয়ে ইসলাম কী বলছে, সে আলোচনা তাই গুরুত্বের দাবি রাখে। সন্তানের লিঙ্গ দেখে জীবন্ত পুঁতে ফেলা, বৈষম্য করা আইয়ামে জাহেলিয়াতের বৈশিষ্ট্য।

মুহাম্মদের (সা.) ইসলাম প্রচারের আগে আরবের বর্বর সমাজে মেয়েশিশুকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হতো। ইসলাম বিষয়টিতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেয়। যে কোনো নারী-পুরুষের সন্তান ছেলে, মেয়ে, নাকি তৃতীয় লিঙ্গের হবে, তা স্রষ্টার ইচ্ছা। এতে বাবা-মায়ের হাত থাকে না। তৃতীয় লিঙ্গের হয়ে কেউ জন্মালে তাকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা, সমাজের অন্যরা তাকে ঘৃণা করার কথা ইসলামের কোথাও বলা নেই। জন্ম থেকে মানুষ বাক, দৃষ্টি, শ্রবণ প্রতিবন্ধী হন। অনেকে 'লিঙ্গ প্রতিবন্ধী' হয়েও জন্মান। ধর্মমতে, তারাও স্রষ্টার আশরাফুল মাখলুকাত। শরিয়া মতে, যাদের পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গ- দুটিই আছে, বা কোনোটিই নেই, তারা নপুংসক। কোরআনে আছে, 'তিনি (আল্লাহ) মাতৃগর্ভে তোমাদেরকে যেমন ইচ্ছা, তেমন রূপ দেন...' (আল ইমরান-৬)। নবি (সা.) বলেন, 'নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের চেহারা, সম্পদ দেখেন না। তিনি তোমাদের হৃদয় ও আমলগুলো দেখেন' (সহি মুসলিম- ৬৭০৮)। শরিয়তে নপুংসকদের মধ্যে পারিবারিক সম্পদ বণ্টনের বিষয়েও স্পষ্ট নির্দেশ আছে।

লিঙ্গ, দৃষ্টি, প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মানো মানে অসুস্থতা। সুস্থতার উদ্দেশ্য মানুষের যে কোনো ধরনের চিকিৎসাকে ইসলাম উৎসাহিত করে। মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসার বিষয়েও ইসলামের নিষেধাজ্ঞা নেই। লিঙ্গ প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মানো কারো মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসা করানোও ধর্মসম্মত। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সম্পর্কে পাঠ্যবইয়ে লেখা রাখা যাবে না, এমন কথা কোরআান, সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াস সমর্থন করে না।
 

হাসান শান্তনু 
সাংবাদিক ও লেখক।
 

সম্পর্কিত বিষয়:

জনপ্রিয়