রোববার ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:২৩, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

নির্বাচনে জাতীয় পার্টি, টেনশনে জামায়াত : মাসুদ কামাল

নির্বাচনে জাতীয় পার্টি, টেনশনে জামায়াত : মাসুদ কামাল
ছবি: সংগৃহীত

সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে নানা ধরনের সমীকরণ তৈরি হচ্ছে। আমি আগে থেকেই বলেছি যে দলটি এখন খুব আলোচনায় নেই, নিজেরাও খুব বেশি আলোচনায় আসছেন না, নীরবে অবস্থান করছে সেই জাতীয় পার্টিই আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে আমি জাতীয় পার্টিকে খুব ভালো কোনো রাজনৈতিক দল মনে করি না। আমরা যখন শেখ হাসিনা সরকারের সমালোচনা করি—যে সরকার গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সেই সমালোচনার একটি অংশ জাতীয় পার্টিরও প্রাপ্য বলে আমি বিশ্বাস করি।

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে মাসুদ কামাল এসব কথা বলেন।

মাসুদ কামাল বলেন, জাতীয় পার্টি যদি আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ ‘ব্ল্যাংক চেক’ না দিত, যদি নিঃশর্তভাবে সহযোগিতা ও সমর্থন না করত, তাহলে আওয়ামী লীগের পক্ষে এতটা স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করা এত সহজ হতো না। কিন্তু জাতীয় পার্টির কয়েকজন নেতা নিজেদের স্বার্থে আওয়ামী লীগকে এভাবে নিরন্তর সমর্থন দিয়ে গেছে, এটিই বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে এ জায়গায় নিয়ে এসেছে।

তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালের যে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেই নির্বাচনের সময় জাতীয় পার্টির অবস্থান ছিল বেশ অদ্ভুত ও অস্পষ্ট।

আমরা দেখেছি, দলের প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তখন তার মনোনয়নপত্রগুলো প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি প্রত্যাহার করলেও সরকার বলল—না, সব মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়নি। বরং তাকে একটি আসনে নির্বাচিত দেখানো হলো, আবার অন্য একটি আসনে পরাজিত দেখানো হলো। অর্থাৎ, এরশাদ বলছেন তিনি নির্বাচন করছেন না, আর সরকার বলছে, তিনি নির্বাচন করেছেন এবং জয়ীও হয়েছেন।

মাসুদ কামাল মনে করেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি চাইলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল—এরশাদ সাহেব তা করতে পারেননি। এর বড় কারণ ছিল বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে তার রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং দলীয় ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব। জাতীয় পার্টির কিছু প্রভাবশালী নেতা তখন রওশনপন্থী হয়ে উঠেছিলেন এবং তারা রওশনকে উৎসাহ দিয়েছিলেন সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে। এই নেগোশিয়েশনের ফলে এরশাদের সামনে আর তেমন কোনো বিকল্প থাকেনি।

তিনি আরো বলেন, জাতীয় পার্টিকে ঘিরে প্রথম বড় ঝামেলাটা শুরু হয় গণ অধিকার পরিষদের অবস্থানকে কেন্দ্র করে। তারা দাবি তোলে—জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন থেকে বাদ দিতে হবে। এই দাবির সঙ্গে যুক্ত হয় এনসিপি এবং অবধারিতভাবে জামায়াতে ইসলামীও। তারা চায় জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়া হোক। কারণ আসলে রাজনৈতিক; এটি নির্বাচনী সমীকরণেরই অংশ।

মাসুদ কামাল বলেন, বাংলাদেশের বাস্তব রাজনীতিতে প্রধান দুটি দল হলো, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আর ‘তৃতীয় শক্তি’ হিসেবে ভারসাম্য রক্ষা করে জাতীয় পার্টি ও জামায়াত। ১৯৯১ সাল থেকে আমরা দেখছি এই দুটো দল যেদিকে থাকে, সেই দিকের পাল্লাই ভারী হয়ে যায়। এবার আওয়ামী লীগ নেই, তাহলে তাদের ভোটগুলো কোথায় যাবে—এটাই মূল প্রশ্ন।

তিনি বলেন, বিএনপি সরকার পতনের পর থেকেই স্থানীয় পর্যায়ে অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে টর্চার, চাঁদাবাজি, নিপীড়নের অভিযোগ এসেছে। ফলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির প্রতি বিরূপ। এমন পরিস্থিতিতে জামায়াত বহু জায়গায় আওয়ামী লীগপন্থী নির্যাতিত বা কোণঠাসা কর্মীদের সহায়তা করেছে। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। এতে জামায়াত আশা করছিল, নৌকা না থাকলে এই ভোটগুলো তারা পাবে। কিন্তু ব্যালটে যদি লাঙ্গল থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের বিচ্ছিন্ন ভোটাররা বিএনপি বা জামায়াতকে ভোট না দিয়ে লাঙ্গলে দিতে পারে। এই সম্ভাবনাই জামায়াতের জন্য বড় চিন্তার কারণ। তাই তারাও চাইছে—জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে বাদ পড়ুক।

তিনি আরো বলেন, অন্যদিকে জাতীয় পার্টির নেতারা সাধারণত মুখে খুব বেশি কিছু বলেন না। টকশোতে কিছু নেতা যুক্তি দেন, যুক্তি দেখান, কিন্তু মাঠে ততোটা সক্রিয় নন। এখন প্রশ্ন হলো—যদি আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা ভোট দেবে এবং জাতীয় পার্টিও অংশ নেয় তাহলে নির্বাচনের পুরো চিত্রই বদলে যেতে পারে। 

জনপ্রিয়