লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন: দেশপ্রেমের উজ্জ্বল প্রতীক

লে. কমান্ডার (অব.) মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন বাংলাদেশের নৌবাহিনীর এক সাহসী ও দেশপ্রেমিক অফিসার। তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম অভিযুক্ত এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর সন্তান হিসেবে জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয়।
১৯৩৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পিরোজপুর জেলার ডুমুরিতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ব্রজমোহন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ১৯৫০ সালে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দেন এবং একই বছর ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীতে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।
১৯৬৭ সালের ৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য’ নামে দায়ের হওয়া ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম আসামি আর লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন দ্বিতীয় আসামি। তীব্র গণআন্দোলনের মুখে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মামলাটি প্রত্যাহার করা হলে তিনি মুক্তি পান।
১৯৭০ সালের ১৮ মার্চ চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হন। স্বাধীনতার ঘোষণার পর ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সকালে কর্নেল তাজের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনারা তাঁর ঢাকার বাসভবনে হামলা চালায় এবং সেখানেই নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।
দেশপ্রেম ও সাহসিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এই বীর শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৭৬ সালের ১৬ জানুয়ারি রাঙামাটিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ ঘাঁটির নামকরণ করা হয় বিএনএস শহীদ মোয়াজ্জেম।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র অভিনেতা রাজের বড় ভাই। বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাসে তাঁর আত্মত্যাগ ও অবদান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।