দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আ.লীগের গোপন মিশন : রনি

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, শারদীয় দুর্গাপূজা নিয়ে বাংলাদেশে রীতিমতো লঙ্কাকাণ্ড ঘটে যাচ্ছে। প্রথমত সরকারের পক্ষ থেকে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা নজিরবিহীন। কারণ, এই দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র আওয়ামী লীগ বা তার সঙ্গীসাথীরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে যে কোনো অঘটন ঘটাতে পারে।
বৃহস্পতিবার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওবার্তায় এসব তিনি কথা বলেন।
রনি বলেন, আমাদের দেশে দুর্গাপূজায় অতীতে যেসব ঘটনা ঘটেনি সেগুলো এই সরকারের সময় হচ্ছে।
এবারের ধর্ম উপদেষ্টা অতীতের যেকোনো ধর্ম উপদেষ্টার চেয়ে ইসলাম বিশারদ, অনেকগুলো ইসলামী সংগঠনের পছন্দের মানুষ তিনি। তিনি এই দুর্গাপূজায় হাজিরা দিচ্ছেন। দুর্গাপূজার মঞ্চে বসে নৃত্য দেখছেন, প্রসাদ খাচ্ছেন। আরেকটি জায়গাতে দেখলাম, পূজার প্রস্তুতি কেমন চলছে এটি দেখার জন্য স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা মানে প্রধানমন্ত্রীর পদে যিনি আছেন সেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস গিয়ে তদারকি করেছেন।
এটিও নজিরবিহীন ঘটনা। পূজার অনুষ্ঠানে একেবারে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রধানমন্ত্রী গিয়েছেন কালেভদ্রে।’
‘কিন্তু এবার ড. ইউনূস সেই কাজগুলো করছেন। এছাড়া ভারতের দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানকে আকর্ষণীয় করার জন্যে সেখানে ইলিশের একটা বিরাট চালান পাঠানো হয়েছে।
আমরা বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ইলিশ খেতে পারছি না। ইলিশের দাম আকাশচুম্বী। তো বাংলাদেশে ইলিশের যে দাম, তার চাইতে অনেক কম দামে ভারতে বিশাল চালান পাঠানো হচ্ছে।’
রনি বলেন, ‘ভারত আমাদের সঙ্গে বিমাতাসূলভ আচরণ করছে। আমাদের অসুস্থ রোগীদেরকে ভারতে যেতে দিচ্ছে না, সীমান্ত প্রায় বন্ধ, ড. ইউনূস সরকারকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে যাচ্ছে।
কিন্তু তারপরেও ভারতকে খুশি করার জন্য সেখানে ইলিশের এই মৌসুমে বিরাট একটা চালান পাঠানো হয়েছে। এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, ভারত চাপ দিয়ে, ভয় দেখিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে এই ইলিশ রপ্তানি করতে বাধ্য করেছে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ওসব কিছু না। আমরা খুশি মনে ভারতের দুর্গা উৎসবকে আনন্দমুখর করার জন্য এই ইলিশ রপ্তানি করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হলো তখনও কিন্তু হিন্দুদের ভারত গমন থেমে থাকেনি। লাস্টের দিকে দেখা গেছে যে, আওয়ামী লীগ হিন্দুদের ভোট পেয়েছে। কিন্তু ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের লোক দ্বারা হিন্দুরা যেভাবে বঞ্চিত হয়েছে, বহু হিন্দু পরিবার বাংলাদেশ ছেড়েছে, নির্যাতন হয়েছে সেটি অতীতের সব রেকর্ড ব্রেক করেছে। এজন্য হিন্দুরাই মাঝেমধ্যে বলে থাকেন যে, আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র আমাদেরকে ব্যবহার করে প্রয়োজনে। আর যখন আমাদের ওপর জুলুম অত্যাচার করার দরকার হয়, তখন অন্য সবার চাইতে আমাদের ওপর জুলুম অত্যাচার তারা বেশি করে।’
রনি বলেন, ‘হিন্দুদের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে অনেক অনাসৃষ্টি তৈরি হয়। আমাদের দেশে কিছু কনজারভেটিভ লোক আছে যারা এই দুর্গাপূজাকে নষ্ট করার জন্য ঈর্ষাবশত এই কাজগুলো করে। আমরা যখন ছোট ছিলাম সেই ৭২, ৭৩ সালে দেখেছি, দুর্গাপূজার দুটো হাত ভেঙে আসল, কালির পা ভেঙে দিল, তারপর গণেশের মাথাটা কেটে নিয়ে আসলো। তো আগের জমানাতে এটাকে ক্রাইম হিসেবে ধরা হতো না।’
‘কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে সেটা হলো হিন্দুদেরকে অপমান করা। এরপরে হিন্দুদের একটি আনন্দময় উৎসবমুখর পরিবেশকে নষ্ট করা এবং তাদের মনে আতঙ্ক তৈরি করে একটা রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য একটা সঙ্ঘবদ্ধ শ্রেণী বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে এসব কাজ করছে। সেই দিক থেকে এখন যেহেতু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নেই, তো এখানে যদি হিন্দুদের ওপর কোনো নির্যাতন হয়; এই পূজা নিয়ে কোনো অঘটন ঘটে, তাহলে তার সব দায় দায়িত্ব সরকারের ওপর পড়বে, বিএনপি, জামায়াতের ওপর পড়বে।’
‘কাজেই এই যে দুর্গাপূজা আসছে, এই দুর্গাপূজাকে পণ্ড করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং তাদের যারা আশ্রয়দাতা রয়েছেন; ভারত সরকার এবং ভারতের বিভিন্ন যে গোষ্ঠী রয়েছে, তারা নানা রকম খেলা করার চেষ্টা করবে। সেই খেলাধুলার ব্যাপারে আমরা যদি সতর্ক থাকি তাহলেই আমাদের সার্বিক কল্যাণ আসবে।’