শনিবার ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:১৫, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

দুদকের অনুসন্ধানে গড়িমসি, দুর্নীতি তদন্তে স্থবিরতা

দুদকের অনুসন্ধানে গড়িমসি, দুর্নীতি তদন্তে স্থবিরতা
ছবি: সংগৃহীত

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের পিও তুহিন ফারাবি ও মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠার পর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও অনুসন্ধান শেষ করতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৪ মে তদন্ত শুরুর পর থেকে সংস্থাটির ভেতরে গড়িমসি, নথি সংগ্রহে ব্যর্থতা, তদন্তের অগ্রগতিতে ঊর্ধ্বতন মহলের কোনো চাপ না পাওয়া এবং ‘অদৃশ্য রাজনৈতিক প্রভাব’ পুরো প্রক্রিয়াকে ধীরগতির করে দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

দুদক সূত্র বলছে, তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে ভয় ও চাপ কাজ করায় সংস্থাটি ইতোমধ্যে তিনবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করেছে। প্রয়োজনে আবারও বদলের চিন্তা চলছে। তা দিয়েও কাজ না হলে বিশেষ কমিটি গঠনের কথা ভাবছে দুদক।

বিএফআইইউ’র সহায়তায় তিনজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেও তারা অভিযোগের যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। বিশেষ করে মোয়াজ্জেম হোসেন ও তুহিন ফারাবির অ্যাকাউন্টে বড় অঙ্কের অস্বাভাবিক লেনদেন মিলেছে বলে জানাচ্ছেন মানিলন্ডারিং শাখার এক কর্মকর্তা।

অভিযোগ রয়েছে—বদলি ও পদোন্নতিতে প্রভাব খাটিয়ে অর্থ আদায়, মন্ত্রণালয়ের কেনাকাটায় কমিশন, ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়ম।

একাধিক সূত্র জানায়, তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগ-সংক্রান্ত নথি সংগ্রহ করতে গেলেই চাপ ও বিড়ম্বনার মুখে পড়ছেন। ফলে অনুসন্ধান কার্যক্রম বারবার থমকে যাচ্ছে। কর্মকর্তাদের দাবি—দুদক যদি অভয় ও স্বাধীনতা দেয়, তবে তদন্ত দ্রুত শেষ করা সম্ভব।

এদিকে দুদক কার্যালয়ে এনসিপি নেতাদের উপস্থিতি হঠাৎ বেড়ে গেছে বলে জানা গেছে। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্তদের মামলা থেকে রক্ষায় তদবির করছেন। এমন অভিযোগের মাঝেই সম্প্রতি এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনের দুদক সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে—যদিও ফোনকলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

তদন্ত বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বলেন, “অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন দেবেন।” তবে কবে জমা পড়বে—জানাতে পারেননি তিনি।

দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে এলে ২২ এপ্রিল উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনকে এবং এর আগে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের পিও তুহিন ফারাবিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করা দুদক গত এক বছরে ৪৪৫টি মামলা করেছে—যেখানে অভিযুক্তের সংখ্যা ১ হাজার ৯২ জন।

তবে উপদেষ্টাদের তিন সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তার তদন্ত এখনো ধাক্কা খাচ্ছে রাজনৈতিক চাপ ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার দেয়ালে।

সূত্র: আমার দেশ

জনপ্রিয়