বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশিত: ১২:১৬, ২০ মে ২০২৫

ভারতীয় আধিপত্য-ধর্মীয় উগ্রতাসহ ৭ বিষয়ে এনসিপির স্পষ্ট অবস্থান

ভারতীয় আধিপত্য-ধর্মীয় উগ্রতাসহ ৭ বিষয়ে এনসিপির স্পষ্ট অবস্থান
সংগৃহীত

বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ‘ফ্যাসিবাদী’ আখ্যা দিয়ে তা থেকে মুক্তি পেতে নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও রাষ্ট্র কাঠামোর পূর্ণ সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের মোড়কে একটি দলীয় ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এনসিপির প্রধান রাজনৈতিক কর্তব্য হচ্ছে সেই ফ্যাসিবাদ ভেঙে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।”

 

রোববার (১৯ মে) জাতীয় নাগরিক পার্টির পাঠানো এক বিবৃতিতে ৭ বিষয়ে রূপরেখা উপস্থাপন করা হয়।

 

বিবৃতিতে নাহিদ ইসলাম স্পষ্ট করে বলেন, “এই রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে হলে শুধু নীতির বদল নয়, প্রয়োজন নতুন সংবিধান। আমরা যে সংবিধান চাই, তা হবে বৈষম্যহীন ইনসাফ, নাগরিক মর্যাদা ও সাম্যভিত্তিক।”

 

এনসিপির মূল দর্শন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান ভিত্তি হলো ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। তবে আমরা শুধু মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল নয়, বরং তার আদর্শ—সাম্য, ইনসাফ ও মানবিক মর্যাদাকে ধারণ করি। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান এবং বাংলার উপনিবেশবিরোধী ও ব্রাহ্মণ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতাকেও রাজনৈতিক ভিত্তি হিসেবে মূল্যায়ন করি।”

 

, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির রাজনৈতিক রূপরেখা

এনসিপির দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, ধর্ম রাষ্ট্রের হাতিয়ার নয়, বরং নাগরিকদের আত্মিক অনুভবের বিষয়। নাহিদ বলেন, “আমরা ধর্মীয় উগ্রতা ও ইসলামবিদ্বেষ উভয়ের বিরোধিতা করি। এনসিপি ইসলামসহ সব ধর্মবিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা ধর্মীয় সহাবস্থান, পারস্পরিক দায়বদ্ধতা ও আন্ত সম্প্রীতির নীতিতে বিশ্বাস করি।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্ম ইসলাম। এর নৈতিকতা, মানবিকতা এবং বাঙালি মুসলমানের ভাষা-সংস্কৃতি ও জীবনচর্চাকে এনসিপি মূল্যায়ন করে। পাশাপাশি আমরা সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

জাতীয় পরিচয়ের নতুন সংজ্ঞা

নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা জাতি, ধর্ম বা গোত্রভিত্তিক পরিচয়ের বাইরে গিয়ে বঙ্গীয় বদ্বীপের সভ্যতাগত পরিচয়কে কেন্দ্র করে জাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই। এনসিপির জাতীয়তাবাদ হবে বহুস্বর, বহুভাষা ও বহুসাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সমন্বয়ে গঠিত।”

নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়ন

নারীর অধিকারের প্রশ্নে এনসিপি বরাবরই সরব। ঘোষণায় বলা হয়, নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এবং নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে এনসিপি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেবে। পারিবারিক আইনের আওতায় সম্পত্তিতে নারীর ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়নেও দলটি সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।

আঞ্চলিক রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের ভূরাজনৈতিক আধিপত্য এবং হিন্দুত্ববাদের প্রসঙ্গে এনসিপির অবস্থান অত্যন্ত কড়া। নাহিদ ইসলাম বলেন, “ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদ বাংলাদেশের জন্য সাংস্কৃতিক ও নিরাপত্তাগত হুমকি। এনসিপি এই আধিপত্যবাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে কঠোর অবস্থান নেবে।”

তিনি যুক্ত করেন, “বাংলাদেশের উচিত ন্যায্যতা, মর্যাদা, সভ্যতা ও জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে কৌশলগত পররাষ্ট্রনীতি গড়ে তোলা।”

অর্থনীতি ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি

এনসিপি একটি ইনসাফভিত্তিক ও কল্যাণমুখী আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার পক্ষে। দলটির দৃষ্টিতে শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, কৃষি, জলবায়ু, নগর ব্যবস্থাপনা, শ্রম অধিকার ও কর্মসংস্থান— এসবই রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণের কেন্দ্রে থাকা উচিত। ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়, বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশকে ঘিরে একটি নতুন আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোন গঠনের ভিশনও রয়েছে এনসিপির।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশ আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই সময় আমাদের কল্পনা করতে হবে একটি নতুন রাষ্ট্র, একটি নতুন সমাজ, যেখানে মানুষ মর্যাদার সঙ্গে বাঁচবে। সেই কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে এনসিপি একটি কাঠামোগত পালাবদলের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে।”