ঝিনাইগাতী সীমান্তে মানবপাচারকারীসহ ৭ জন আটক

ঝিনাইগাতী সীমান্তপথ দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় নারী ও শিশুসহ ৭ জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আটককৃতদের মধ্যে দুজন মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য।
সোমবার (২৫ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি) বিষয়টি নিশ্চিত করে।
এর আগে, ভোর সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার নওকুচি এলাকার কালীমন্দির-সংলগ্ন সীমান্ত পিলার ১১০৪/৯-এস থেকে প্রায় ৭০০ গজ বাংলাদেশের ভেতরে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়নের (৩৯ বিজিবি) নকশী বিওপির বিশেষ টহল দল।
বিজিবি সূত্র জানায়, আটককৃতদের মধ্যে দুজন মানবপাচারকারী এবং পাঁচজন বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন। পাঁচজনের মধ্যে তিনজন নারী, একজন শিশু ও একজন পুরুষ। তারা পাসপোর্ট ছাড়া অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরার সময় ধরা পড়ে।
গ্রেপ্তার মানবপাচারকারীরা হলেন, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বরুঙ্গা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে রমজান আলী (২৪) এবং একই গ্রামের আসমত আলীর ছেলে রাসেল মিয়া (১৬)। তারা সম্পর্কে মামা-ভাগিনা।
আটক হওয়া ভুক্তভোগীরা হলেন, নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার বোমভাগ গ্রামের মেলদার শেখের ছেলে শামীম শেখ (২৩), একই গ্রামের হায়দার আলীর মেয়ে মোছা. আফসানা (২২), কালিয়ার কুলসুর গ্রামের মৃত মনির হোসেন পাটোয়ারীর মেয়ে রুমা বেগম (৩২), একই গ্রামের মৃত উজ্জ্বল বিশ্বাসের স্ত্রী মিলিনা বিশ্বাস (২৮) এবং মিলিনা বিশ্বাসের শিশু সন্তান কাশেম বিশ্বাস (৩)।
বিজিবি জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক অনুপ্রবেশকারীরা জানিয়েছেন, তারা গত ২৩ আগস্ট শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্ত দিয়ে পাচারকারী রমজান আলী ও রাসেল মিয়ার সহায়তায় জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। সম্প্রতি ভারতীয় পুলিশের অভিযানের কারণে নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে তারা পুনরায় একই পাচারকারী চক্রের সহায়তায় ঝিনাইগাতী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ফেরেন।
গ্রেপ্তার মানবপাচারকারীরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশি ও ভারতীয় নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবি ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় পাচারচক্রের মূলহোতাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বিজিবি আরও জানায়, আটক মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২-এর অধীনে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া আটক পাঁচ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় পুলিশের কাছে হস্তান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি) সোমবার দিবাগত রাত ১২টায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলার সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান ও মানবপাচার রোধে বিজিবি সর্বদা সতর্ক এবং ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল আমিন বলেন, ধৃত দুই আসামি স্বীকার করেছেন, তারা ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের ভারতে পাচারের জন্য নিয়ে যাচ্ছিল। তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচারে প্রচেষ্টা ও প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২-এর ৬/৭/৮ ধারায় মামলা করা হয়েছে। মামলাটি নকশী বিজিবি ক্যাম্প থেকে করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া পাঁচজনকে পরিবারের জিম্মায় দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।