শুক্রবার ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ৯ কার্তিক ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৪৭, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

হ্যান্ডমেড গহনায় নিতুর সাফল্য

হ্যান্ডমেড গহনায় নিতুর সাফল্য
ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ি পানির ট্যাংক এলাকার মেয়ে নাজিয়া আক্তার নিতু, বর্তমানে দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাওয়ার ডিপার্টমেন্টের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি এখন একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা। শখের বসে শুরু করা তার হাতের তৈরি আর্টিফিশিয়াল গহনার কাজ আজ তাকে এনে দিয়েছে আত্মনির্ভরতার অনুপ্রেরণা।

নিজ ঘরেই বসে নিতু তৈরি করেন নানান ধরনের হ্যান্ডমেইড আর্টিফিশিয়াল গহনা—যা তিনি অনলাইন ও অফলাইনে বিক্রি করেন। এই আয় দিয়েই তিনি নিজের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন। অনলাইনে ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ রাজশাহী সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তার এই হাতের তৈরি আর্টিফিশিয়ারি গহনা বিক্রি হচ্ছে।

বর্তমানে সে প্রতি মাসে গড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা আয় করেন, আর বিয়ের মৌসুমে এই আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ হাজার টাকারও বেশি।

নিতুর উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প শুরু ২০২১ সালে, যখন তিনি দশম শ্রেণিতে পড়তেন। ইউটিউবে আর্টিফিশিয়াল ফুল দিয়ে গহনা বানানোর একটি ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে মাত্র দুই হাজার টাকা মূলধন নিয়ে শুরু করেন নিজের গহনা তৈরির যাত্রা। প্রথম গহনাগুলো আত্মীয়স্বজনের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়, বিশেষ করে গায়ে হলুদ, বিভিন্ন পার্টি, বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানেও ব্যবহারের জন্য। এরপরই নিতু খুলে ফেলেন নিজের অনলাইন পেজ।

নিতু বলেন, প্রথমে একেবারেই শখের বসে কাজটা শুরু করেছিলাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই শখই এখন আমার জীবনের বড় একটা অংশ হয়ে উঠেছে। নিজের হাতে তৈরি জিনিস মানুষ যখন পছন্দ করে, তখন যে আনন্দটা পাই—সেটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া।

ইনশাআল্লাহ, ভবিষ্যতে আমি আমার নিজের একটি আউটলেট খুলব। সেখানে আমার তৈরি জুয়েলারি, অর্গানিক মেহেদী, শাড়ি, বিয়ের ঘুমটা—সবকিছু একসাথে পাওয়া যাবে। আমি চাই, আমার ব্র্যান্ডের মাধ্যমে মেয়েরা যেন তাদের পছন্দের সাজগোজের সব কিছু এক জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে পারে।

বর্তমানে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম যেভাবে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে আমি বিশ্বাস করি আর্টিফিশিয়াল গহনার বাজারে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এক সময় এই আর্টিফিশিয়াল জুয়েলারিই মেয়েদের হৃদয় জয় করবে। আমি সেই সম্ভাবনাটাকে কাজে লাগাতে চাই।

নিতুর বাবা কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, সবসময় মেয়েকে অনুপ্রেরণা দিয়েছি নিজে কিছু করতে। ওর হাতের কাজগুলো খুব নিখুঁত, আমি চাই এই প্রতিভা আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়ুক। নিতুর কাজ এখন শুধু তার শখ নয়, এটা তার আত্মনির্ভরতার প্রতীক।

নিতুর কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এখন অনেকেই তার কাছ থেকে গহনা তৈরির প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

বালুয়াডাঙ্গার শামীমা আক্তার নুপুর বলেন, নিতুর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন নিজ নিজ বাড়িতে বসেই গহনা তৈরির কাজ করছেন।

জাকিয়া সুলতানা বলেন, নিতু আপুর কাছ থেকে কাজটা শিখে এখন নিজেই ঘরে বসে গহনা তৈরি করছি। এটা শুধু শখ নয়, একটা উপার্জনের পথও খুলে দিয়েছে।

লিম্পা আক্তার জানান, নিতু আপু খুব মনোযোগ দিয়ে শেখান। এখন নিজের হাতে বানানো গহনা অনলাইনে বিক্রি করতে পারছি। পরিবারের সবার সহায়তায় আমি এখন আত্মনির্ভর।

মালিহা মেহজাবিন বলেন, নিতু আপুর কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি। ওর মতো আমরাও এখন বাড়িতে বসেই আয় করতে পারছি।”

পঞ্চগড়ের ক্রেতা শামীমা আক্তার শর্মি বলেন, নিতুর তৈরি গহনা খুবই মানসম্মত ও নান্দনিক। বিশেষ করে গায়ে হলুদের জন্য তার ডিজাইনগুলো অন্যরকম।

জনপ্রিয়