গাজায় মৃত্যুমিছিল থামছে না: ধ্বংসস্তূপে চাপা মরদেহ

ইসরায়েলের নিরলস হামলা, অবরোধ ও দুর্ভিক্ষে গাজায় প্রতিদিনই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সেখানে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৩৬৮ জনে। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় বোমাবর্ষণে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৬৮ জন এবং আহত হয়েছেন ৩৬২ জন।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ৬৪ হাজার ৪০০ জনের কাছাকাছি মানুষ। মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৬২ হাজার ৩৬৭ জনে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বহু মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপ ও রাস্তায় পড়ে আছেন, যাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে মানবিক সহায়তা নিতে গিয়েও প্রাণ হারাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে ২৩ জন নিহত এবং ১৪৩ জন আহত হয়েছেন। চলতি বছরের ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত সহায়তা নিতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৩৮৫ জন এবং আহত হয়েছেন ১৭ হাজার ৫৭৭ জনের বেশি মানুষ।
অবরোধ ও ক্ষুধাজনিত কারণেও প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে। গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টি ও অনাহারে আরও ছয়জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন, তাদের মধ্যে একজন শিশু। ফলে অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮২ জনে, যার মধ্যে ১৩৫ শিশু।
গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজার সব সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়ায় ২৪ লাখ মানুষের এই ভূখণ্ড ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে পড়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা জরিপে ইতোমধ্যেই গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত হওয়া গেছে। সংস্থাটি আশঙ্কা করছে, চলতি মাসের শেষ নাগাদ এ দুর্ভিক্ষ আরও দক্ষিণাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়বে।
এছাড়া গত ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া নতুন সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৮২৮ জন নিহত ও ৫০ হাজার ৩২৬ জন আহত হয়েছেন। এতে জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি কার্যত ভেঙে গেছে।
শুক্রবার গাজায় ইসরায়েলের টানা সামরিক অভিযান ৭০০ দিনে গড়িয়েছে। এই দীর্ঘ হামলায় গোটা ভূখণ্ড বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং মানুষ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে ভুগছে।
গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলাও চলছে।