যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পবিরোধী ‘নো কিংস’ আন্দোলন, লাখো মানুষের বিক্ষোভ

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্তৃত্ববাদী নীতি ও শাসনপ্রবণতার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে লাখো মানুষ। “নো কিংস” নামে এই দেশব্যাপী আন্দোলনকে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বৃহৎ রাজনৈতিক প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রোববার (১৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, মায়ামি এবং লস অ্যাঞ্জেলেস সহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব বড় শহরেই একযোগে ট্রাম্পবিরোধী এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার সকাল থেকেই শুরু হওয়া আন্দোলন দুপুরের মধ্যেই জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
নিউইয়র্কের টাইমস স্কোয়ার সকাল থেকেই ছিল উত্তাল জনসমুদ্রে পরিণত। রাস্তাঘাট, সাবওয়ে স্টেশন—সব জায়গায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। বিক্ষোভকারীদের হাতে নানা রঙের প্ল্যাকার্ড—কোথাও লেখা ছিল “গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র নয়”, আবার কোথাও “সংবিধান ঐচ্ছিক নয়”।
বিক্ষোভ শুরুর আগে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মহল অভিযোগ তোলে, আন্দোলনে নাকি বামপন্থি সংগঠন ‘অ্যান্টিফা’ সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। তারা একে “হেইট আমেরিকা র্যালি” বলেও অভিহিত করেন। তবে আন্দোলনের আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীরা এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জানান, ‘নো কিংস’ আন্দোলনের মূল নীতি হলো অহিংসা ও শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ। আন্দোলনের ওয়েবসাইটেও বলা হয়েছে—অংশগ্রহণকারীদের সম্ভাব্য সংঘাত থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এনওয়াইপিডি) জানায়, শহরে প্রায় এক লাখ মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন এবং কোনো ধরনের গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেনি। শুধু সেভেন্থ অ্যাভিনিউতেই অন্তত ২০ হাজার মানুষ মিছিল করেছেন বলে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া লেখক ও সম্পাদক বেথ জাসলফ বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসনের স্বৈরাচারী প্রবণতা আমাকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। আমি নিউইয়র্ককে ভালোবাসি—আর আজ এত মানুষের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকতে পেরে আমি আশাবাদী।”
বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসে ফেরার পর ট্রাম্প নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগে আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছেন। তিনি কংগ্রেস অনুমোদিত তহবিল আটকে দিয়েছেন, ফেডারেল প্রশাসনের বিভিন্ন শাখা ভেঙে দিয়েছেন, বিদেশি পণ্যে ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছেন এবং গভর্নরদের আপত্তি উপেক্ষা করে কিছু অঙ্গরাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন।
ট্রাম্প অবশ্য তার সব পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। তার দাবি, “দেশকে পুনর্গঠনের জন্য এসব পদক্ষেপ অত্যাবশ্যক।”
তিনি একনায়কতন্ত্র বা ফ্যাসিবাদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এসব ‘উন্মাদ ও ভিত্তিহীন দাবি’।
তবে সমালোচকদের মতে, তার অনেক সিদ্ধান্তই সংবিধানবিরোধী এবং যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য এক গুরুতর হুমকি হয়ে উঠছে।