বুধবার ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ২ ডিসেম্বর ২০২৫

ইতিহাস গড়ল তুরস্কের মানববিহীন যুদ্ধবিমান

ইতিহাস গড়ল তুরস্কের মানববিহীন যুদ্ধবিমান
ছবি: সংগৃহীত

তুরস্ক মানববিহীন যুদ্ধবিমানের আকাশ–থেকে–আকাশে নিক্ষেপযোগ্য (বিভিআর) ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়ে বিশ্ব সামরিক প্রযুক্তিতে নতুন ইতিহাস গড়েছে। ফাইটার জেট প্রযুক্তির উন্নয়নে এটি দেশটির জন্য এক যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই মানববিহীন যুদ্ধবিমানের নাম বায়রাকতার কিজিলেলমা। গত ৩০ নভেম্বর, রোববার, বায়কার এক ঘোষণায় জানায়, কিজিলেলমা আকাশ–থেকে–আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে জেট ইঞ্জিনচালিত একটি চলমান উড়ন্ত লক্ষ্যবস্তুকে সফলভাবে আঘাত করেছে। এটিই বিশ্বের প্রথম ঘটনা যেখানে কোনো মানববিহীন যুদ্ধবিমান (বিভিআর) পাল্লায় এয়ার–টু–এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে টার্গেট ধ্বংস করেছে।

এন–সোশ্যাল-এ দেওয়া এক পোস্টে প্রতিষ্ঠানটি জানায়,
“বিশ্বে প্রথমবারের মতো কোনো মানববিহীন যুদ্ধবিমান BVR দূরত্বে এয়ার–টু–এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে চলমান লক্ষ্যবস্তুকে ভূপাতিত করল।”

এই পরীক্ষায় ব্যবহৃত হয়েছে স্থানীয়ভাবে তৈরি আকাশ–থেকে–আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র গোকদোয়ান। বায়কার আরও জানায়, কিজিলেলমা এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে উচ্চগতির জেটচালিত লক্ষ্যবস্তুকে নিখুঁতভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রটি বিমানটির ডানার নিচে সংযুক্ত পড থেকে নিক্ষেপ করা হয়।

টার্গেট শনাক্ত ও অনুসরণে ব্যবহার করা হয়েছে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি মুরাদ AESA রাডার, যা তৈরি করেছে তুরস্কের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আসেলসান। লক্ষ্যবস্তু রাডারে ধরা পড়ার পরই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

এটি তুরস্কের ইতিহাসেও প্রথম সফল এয়ার–টু–এয়ার আঘাত, যেখানে মানববিহীন যুদ্ধবিমান স্থানীয় রাডার ব্যবস্থা ব্যবহার করে উড়ন্ত জেট লক্ষ্যবস্তুতে সরাসরি আঘাত হেনেছে। এই পরীক্ষার মধ্যদিয়ে কিজিলেলমা আকাশযুদ্ধে সক্ষম বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র স্বীকৃত মানববিহীন প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠল।

পূর্বে এই যুদ্ধবিমান এফ‑১৬-কে লক্ষ্য করে পরীক্ষামূলক মিশনও পরিচালনা করেছিল বলে জানিয়েছে বায়কার। এটি দেশটির দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ।

সিনোপ প্রদেশ-এর আকাশে পরিচালিত এই পরীক্ষা ছিল দেশটির জন্য এক ঐতিহাসিক প্রযুক্তি প্রদর্শনী। সামাজিকমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়,
মেরজিফন বিমান ঘাঁটি থেকে ৫টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কিজিলেলমার সঙ্গে একযোগে উড্ডয়ন করছে।

মনুষ্যচালিত যুদ্ধবিমান ও মানববিহীন প্ল্যাটফর্মের এই যৌথ মিশন আকাশযুদ্ধের ভবিষ্যৎ ধারণায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মিশনের আকাশ ভিডিও ধারণে ব্যবহার করা হয়েছে আরেকটি ড্রোন, বায়রাকতার আকিনচি।

বায়কারের চেয়ারম্যান ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সেলচুক বায়রাকতার এক ভিডিও বার্তায় বলেন,“আজ উড্ডয়ন প্রযুক্তির ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করলো বায়রাকতার।”

তিনি আরও বলেন,“বিশ্বে প্রথমবারের মতো কোনো মানববিহীন যুদ্ধবিমান রাডার–নির্দেশিত আকাশ–থেকে–আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে নিখুঁতভাবে আকাশের লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করলো।”

স্বল্প রাডার সিগনেচার ও উন্নত সেন্সর প্রযুক্তির কারণে কিজিলেলমা দূর থেকেই শত্রু বিমান শনাক্ত করতে পারে, কিন্তু সহজে রাডারে ধরা পড়ে না, যা একে আধুনিক আকাশযুদ্ধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম করে তুলেছে।

এর আগে এটি স্থল আক্রমণেও সফল পরীক্ষা চালিয়েছিল, যেখানে ব্যবহৃত হয়েছিল গোলাবারুদ তোলুন এবং তেবের-৮২।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

জনপ্রিয়