শুক্রবার ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ৯ কার্তিক ১৪৩২

সংবাদ পরিক্রমা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:০৮, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

২০ শ্রমিক এক হলেই করা যাবে ট্রেড ইউনিয়ন

২০ শ্রমিক এক হলেই করা যাবে ট্রেড ইউনিয়ন
ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশের অনুমোদন দিয়েছে। এর ফলে এখন থেকে মাত্র ২০ জন শ্রমিক থাকলেও ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি নতুন খাতকে আইনি সুরক্ষার আওতায় আনা হয়েছে।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে—শ্রমিকদের ‘ব্ল্যাকলিস্ট’ করার প্রচলন সম্পূর্ণ বেআইনি ঘোষণা করা। এর আগে নিয়োগকর্তারা অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট শ্রমিকদের ভবিষ্যতে চাকরি পাওয়ায় বাধা দিতে পারতেন; নতুন আইনে সেই প্রথা বন্ধ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সংশোধিত আইনের অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কারখানার শ্রমিকসংখ্যা অনুযায়ী ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে— ২০ থেকে ৩০০ শ্রমিক থাকলে অন্তত ২০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে। ৩০১ থেকে ১,০০০ শ্রমিক থাকলে ৪০ জন শ্রমিকের সম্মতি প্রয়োজন। ১,০০১ থেকে ৩,০০০ শ্রমিকের কারখানায় ৩০০ জন, এবং ৩,০০১ বা তার বেশি শ্রমিকের ক্ষেত্রে ৪০০ জনের সম্মতি লাগবে।

এছাড়া, একটি কারখানায় সর্বোচ্চ পাঁচটি ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অনুমতি থাকবে।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আরও জানান, সংশোধিত আইনে মোট ১৮৪টি পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন হলো—বেসরকারি খাতের নিয়োগকর্তাদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন অথবা শ্রমিকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, নতুন শ্রম আইনটি শ্রমের সংজ্ঞাকে আরও বিস্তৃত করেছে। ফলে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, গৃহকর্মী, এবং সমুদ্র খাতে কর্মরত শ্রমিকরা এখন থেকে অন্যান্য শ্রমিকদের মতোই সমান আইনি অধিকার ও সুরক্ষা পাবেন।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সভাপতি ফজলে শামীম এহসান এ বিষয়ে মন্তব্য করেন, “এক হাজার শ্রমিকের কারখানায় যদি মাত্র ৪০ জনে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যায়, তাহলে ট্রেড ইউনিয়ন সংস্কৃতি নষ্ট হবে।”

তিনি আরও বলেন, “সরকার বিদেশিদের মন রক্ষা করতে গিয়ে অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। তারা চলে যাবে, কিন্তু দেশকে বিপদে ফেলে যাবে।”

অপরদিকে, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক ও শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তার এই সংস্কারকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, “মনিটরিং শক্ত হলে এবং মালিক ও শ্রমিক উভয়ের মধ্যে আইন সম্পর্কে সমান ধারণা থাকলে ২০ জনে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ ক্ষতির নয়, বরং ইতিবাচক পদক্ষেপ।”

তবে তিনি সতর্ক করে দেন, “২০ শতাংশ সম্মতির শর্ত তুলে দেওয়ার পর শিল্পখাতে অস্থিরতা রোধে অবশ্যই কঠোর নজরদারি থাকতে হবে।”

এই সংশোধনগুলোর মাধ্যমে শ্রম অধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো, যা শ্রমিকদের অধিকতর সংগঠিত ও সুরক্ষিত করার পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

জনপ্রিয়