বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ৫৪তম শাহাদতবার্ষিকী আজ
আজ ১০ ডিসেম্বর। বীরশ্রেষ্ঠ মো. রুহুল আমিনের ৫৪তম শাহাদতবার্ষিকী। মহান মুক্তিযুদ্ধের সূর্যসন্তান, ৭ বীরশ্রেষ্ঠের অন্যতম এই বীর সেনানী ১৯৭১ সালের এ দিনে খুলনার রূপসা নদীর তীরে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শাহাদতবরণ করেন।
মো. রুহুল আমিন ১৯৩৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর তৎকালীন বেগমগঞ্জ (বর্তমানে সোনাইমুড়ি উপজেলা) দেওটি ইউনিয়নের বাঘপাঁচরা গ্রামে—যা বর্তমানে রুহুল আমিন নগর নামে পরিচিত—এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আজহার পাটোয়ারী এবং মা জোলেখা খাতুন।
১৯৫০ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকায় একটি পত্রিকা অফিসে চাকরি গ্রহণ করেন। পরে যোগ দেন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে নাবিক পদে। মেধা ও কর্মদক্ষতার গুণে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার পদে উন্নীত হন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে বদলি করা হয়, কিন্তু তিনি সেখানে যাননি। এ সময় পাঁচ সন্তান রেখে তাঁর স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। সবকিছু পেছনে ফেলে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
প্রথমে তিনি নান্দিয়াপাড়ায় লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরে জেনারেল ওসমানীর নির্দেশে নৌবাহিনী গঠনের উদ্দেশ্যে ভারতে যাওয়ার দায়িত্ব পান। এপ্রিল মাসে ত্রিপুরা সীমান্ত হয়ে ভারতে পৌঁছে তিনি ২ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন এবং সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সেক্টরের অধীনে বহু স্থলযুদ্ধে অংশ নেন। নৌবাহিনী গঠনের কাজে অংশ নিতে তিনি আগরতলায় নৌসেনাদের সঙ্গে একত্রিত হন এবং পরে কলকাতার নৌ-সেক্টরে যোগ দেন।
ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া দুটি টাগবোটকে গানবোটে রূপান্তর করা হলে একটির নাম দেওয়া হয় ‘পদ্মা’ এবং অন্যটির ‘পলাশ’। রুহুল আমিন ‘পলাশ’-এর প্রধান ইঞ্জিনিয়ার (আর্টিফিসার) হিসেবে দায়িত্ব পান।
৬ ডিসেম্বর যশোর সেনানিবাস হানাদারমুক্ত হওয়ার পর নৌপথে যুদ্ধ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে কৌশলগত কারণে মোংলা বন্দর ও খালিশপুরে অবস্থানরত নৌযোদ্ধাদের হিরণ পয়েন্টে রণতরি ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু রুহুল আমিন সেই নির্দেশ মানতে অস্বীকৃতি জানান—তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন।
এ সময় পাকিস্তানি বাহিনীর বিমান হামলায় ‘পলাশ’-এর ইঞ্জিন রুমে সরাসরি গোলা আঘাত করে। বিস্ফোরণে তাঁর ডান হাত উড়ে যায় এবং নৌযানটিতে আগুন ধরে যায়। তিনি নদীতে লাফ দেন, কিন্তু রাজাকাররা তাঁকে ধরে ফেলে নির্মম নির্যাতন চালায়। এই নির্যাতনেই তিনি শাহাদতবরণ করেন।
স্বাধীনতাযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের কিছুদিন পর জানা যায়, রুহুল আমিন খুলনার হিরণ পয়েন্টে শত্রু বিমানের অতর্কিত হামলায় রণতরি বিধ্বস্ত হয়ে শহীদ হন। তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি; ধারণা করা হয়, তাঁকে খালিশপুর এলাকায় দাফন করা হয়।



























